দুজনের কাজ করেন তিনি একাই। তিনি মাঠে থাকা মানে প্রতিপক্ষের জন্য বড় চিন্তার কারণ। বাংলাদেশ দলে সাকিব আল হাসানের অবস্থান ঠিক এমনই। আজ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম টেস্ট। নানা শঙ্কা ছাপিয়ে এ টেস্টে খেলছেন সাকিব। এমনটিই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর করোনা আক্রান্ত হন সাকিব। প্রথম টেস্ট শুরুর দুদিন আগে খবর আগে করোনামুক্ত সাকিব। তারপর শুরু হয় প্রথম টেস্টে তাকে খেলা নিয়ে নানা কথা বার্তা। শুক্রবার হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়েছিলেন, সাকিব সুস্থ হলেও শতভাগ ফিট নন। তিনি সবসময়ই শতভাগ ফিট সাকিবকেই চান। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অবশ্য জানিয়েছিলেন, সাকিব চাইলেই খেলতে পারেন।
শুক্রবারই চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। শনিবার সকালে করেন অনুশীলন। যদিও বোলিং ও ফিল্ডিং করতে পারেননি তিনি বৃষ্টির কারণে। তবে তার ব্যাটিং দেখেই হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করেছে, সে ফিট। সে কারণেই প্রথম টেস্টে সাকিবের খেলা নিয়ে নিশ্চিত করে বললেন মুমিনুল। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার তিনি বলেন, ‘(অনুশীলনে) দেখে তো ভালোই মনে হলো (সাকিবকে)। ব্যাটিং তো ভালোই করলেন আমার কাছে মনে হলো। হ্যাঁ, খেলবেন ইনশাআল্লাহ।’ সদ্য কোভিড থেকে ফেরায় সাকিবের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংশয় ছিল। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেন, সাকিবের শারীরিক অবস্থা দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। ৬০-৭০ ভাগ ফিট হলেও সাকিবকে খেলানোর ঝুঁকি দল নেবে না। অনুশীলনে সাকিবের কোনো ফিটনেস পরীক্ষা হতে দেখা যায়নি। আলাদা কোনো রানিং সেশনও ছিল না তার। আদতে কি তিনি ৭০ ভাগের বেশি ফিট? সরাসরি এ প্রশ্ন সাকিবের শারীরিক অবস্থার কথা মুমিনুল উল্লেখ করলেও জোর দিলেন মানসিক অবস্থার ওপর।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে তা-ই মনে হয়েছে (৭০ ভাগের বেশি ফিট)। আমার সবচেয়ে বেশি ‘ইয়ে’ লাগে, সাকিব ভাইয়ের সাইকোলজি অনেক শক্তিশালী। উনি যদি চায় তো উনি খেলতে পারবেন। আপনারও জানেন সেটা। আমার চেয়ে আপনারাও ভালো জানেন। আমার কাছে ওটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’ কোচ ডমিঙ্গো শুক্রবার বলেছিলেন, দিনে ১৫ ওভার বোলিং করা ও উইকেটে গিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা ব্যাটিং করার মতো অবস্থায় থাকলেই শুধু সাকিবকে বিবেচনায় নেওয়া হবে। শনিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নেটে আধঘণ্টার ব্যাটিং অনুশীলন ছাড়া আর কোনো স্কিল অনুশীলন করতে তাকে দেখা যায়নি। তবে মুমিনুল বললেন, ব্যাটিং দেখেই তারা সাকিবের শারীরিক অবস্থার সবটুকু বুঝে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছ মনে হয়, একটা খেলোয়াড়ের ব্যাটিং দেখলেই অনেক কিছু বোঝা যায়। তার সাইকোলজি অনেক কিছু বোঝা যায়। আপনারাই মনে হয় আমার থেকে বেশি দেখেছেন, আমি তো আমার ব্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আপনারা ভালো বুঝতে পারবেন। উনি শতভাগ ফিট। খেলার জন্য ফিট, যেটা আমার কাছে মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে।’
গত নিউজিল্যান্ড সফরের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এবং এবার এ সিরিজে প্রতিবারই সাকিবকে অনিশ্চয়তা দেখা গেছে অনেক। তাকে দলে পাওয়া নিয়ে সংশয়, টানাপড়েন গত কয়েক বছরেই দেখা গেছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে অনিশ্চয়তা মানে দলীয় পরিকল্পনাও ব্যহত হতে পারে বারবার। তবে মুমিনুলের সমস্যা হয় না বলেই তিনি দাবি করলেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, পুরো বিষয়টি চিন্তার ওপরে, আপনি কীভাবে চিন্তা করবেন। এরকম পরিবর্তন আমার জন্য সমস্যা হবে কিনা, আমি যদি এভাবে চিন্তা করিÑ তাহলে সমস্যা তৈরি হবে, আমি যদি চিন্তা করি সমস্যা তৈরি হবে না, তাহলে সমস্যা হবে না।’ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রসঙ্গ টেনে মুমিনুল বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় তো উনি খেলতেনই। পারিবারিক সমস্যায় খেলতে পারেননি। আর এখানে তো খেলার কথা ছিল। কালকেও খেলবেন। হয়তো কোভিডের কারণে সংশয় ছিল। এগুলো নিয়ে আমরা অত বেশি চিন্তা করি না।’ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একদিন আগে বলেছিলেন, ‘হয়তো সে খেলতে পারে আবার নাও খেলতে পারে। সাকিব, দল ও মেডিকেল দলের ওপর নির্ভর করছে। এখানে আবেগী হওয়ার কিছু নেই। করোনা নেগেটিভ হয়ে খেলা, এটা যদি ওয়ানডে হতো; আমরা বলতাম খেলো। এটা পাঁচ দিনের খেলা, আমরা চাইব না ওর জন্য বাড়তি চাপ হোক বা ক্ষতির ইস্যু হোক। ওকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে। ও যদি খেলতে চায়, ও খেলবে। ওকে তো না করার কোনো সুযোগ নেই।’