logo
আপডেট : ১৫ মে, ২০২২ ০০:০৯
ভারতে আটকের খবর জানে না দুদক
পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর উপায় কি?
# ১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বেনাপোল দিয়ে দেশত্যাগ করে পি কে # দুদকের ৩৪ মামলায় পিকে আসামী, ১টির প্রস্তুতি চলছে
জুনায়েদ হোসাইন

পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর উপায় কি?

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলোচিত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিবাজ প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ভারতের কলকাতায় আটক হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে। শিবশংকর নামে তিনি ভারতে বসবাস করতেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

শনিবার ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পিকে হালদাসহ তার কয়েকজন সহযোগীদের সম্পত্তির খোঁজে অভিযান চালিয়েছেন। এ সময় আটকের খবর আসে।

শনিবার (১৪ মে) বিকেল ৫ টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে নেই বলে ভোরের আকাশকে জানিয়েছেন, সংস্থার চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, এমন কোনো খবর এখনো জানি না। টেলিভিশন দেখিনি।

তবে, দুদকের মামলার কোন আসামী বিদেশে আটক হলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ঠিক কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে? এই প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন- দেশের বাহিরে কোনো আসামী আটকের বিষয় দুইদেশের মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (মীমাংসামূলক পদ্ধতি) এর মাধ্যমে সমাধান করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমাদের যে প্রসিডিউর (পদ্ধতি) তা’ দেখা হবে। তবে আপনি যে সম্পর্কে (পি কে) বলেছেন, সে বিষয়ে এখনো আমরা কিছু জানি না।’

জানা গেছে, প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশত্যাগ করেন। এর আগের দিন (২২ অক্টোবর) তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দুদক। যদিও ওই চিঠি ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে পৌঁছানোর আগেই তিনি দেশ ত্যাগ করেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে কমিশন প্রায় ২৩শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা দায়ের করেছে। আরো একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে জানান, পি কে হালদার এখন পর্যন্ত ৩৪টি মামলার আসামী। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে ২ হাজার ১২৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ আত্মসাত এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।

এ ছাড়া পি কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরো ৭টি মামলা রয়েছে।

সংস্থার জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, ইতিমধ্যে পি কে সিন্ডিকেটের ৩৩ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন নির্দিষ্ট সময়ে সম্পদ বিবরণী কমিশনে দাখিল করেন নি। তাদের বিরুদ্ধে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে মামলা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত পি কে হালদারের ৮৩ জন সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। ৬৪ জন আসামী ও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। ১৩ জন আসামীকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ জন আসামী আদালতে নিজের দোষ স্বাীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

যেসব মামলায় পি কে আসামী :
দুদক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ১৬০০ কোটি টাকা আত্নসাতে ২২ টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এতে পি কে হালদারসহ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এর চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, বাসুদেব ব্যানার্জী, নওশেরুল ইসলামসহ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এর ১০ জন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পিপলস লিজিং এর চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীসহ প্রায় ৩৫ জনকে আসামী করা হয়।

এ ছাড়া পি কে হালদারের অর্থ আত্নসাত বিষয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির কমিশন সভায় ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরো ১৩ মামলা অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১২টি মামলা দায়ের করেছেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলায় আসামী করা হয়েছে- ফাস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান, বোর্ড সদস্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রায় ৪০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঋণ গ্রহিতাকে। ৫২৩ কোটি টাকার মামলার তথ্য থেকে জানা গেছে, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে এন্ডবি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৪ কোটি, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ ৪৫ কোটি টাকা, নিউট্রিক্যাল ৩০ কোটি টাকা, এস এ এন্টারপ্রাইজ ৪২ কোটি টাকা, সুখাদা ৪০ কোটি টাকা, মটিবি মেরিন ৪০ কোটি টাকা, হাল ইন্টারন্যাশনাল ৪৫ কোটি টাকা, স্বন্দীপ কর্পোরেশন ৪০ কোটি টাকা, দিয়া শিপিং ৪৪ কোটি টাকা, মুন এন্টারপ্রাইজ ৩৫ কোটি টাকা, বর্ণ ৩৮ কোটি টাকা, আরবি ৪০ কোটি টাকা এবং মেরিন ট্রাস্ট ৪০ কোটি টাকাসহ মোট ৫২৩ কোটি টাকা।