হুহু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। বিদ্যুতবেগে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের আয় কমেছে। কচ্ছপ গতির উপার্জনক্ষমতা নিয়ে আকাশচুম্বি-লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের সাথে পেরে ওঠা যারপরনাই কঠিনতর। করোনার তা-ব সাময়িক সময়ের জন্য থেমে থাকলেও অকস্যাৎ বৃহৎ ধাক্কা নিয়ে পুনরায় হাজির হবে বলে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ, উর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের সীমাহীন দুর্দশার যবনিকা ঘটছে না সহসাই। চারপাশের এত সব সীমাবদ্ধতার সাথে মোকাবিলা করে, করোনার আশু প্রকোপের শঙ্কা মাথায় নিয়ে জনগণ যে অন্তহীন হতাশার প্রহর গুনে দিবানিশি পার করছে, স্বল্প জ্ঞানী যে কেউও এটা বুঝতে পারে।
নিত্যপণ্য নিয়ে ছিনিমিনি শুরু করা অসাধু ব্যবসায়ী-সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম রুখতে সরকারকে নিতে হবে সতর্ক অবস্থান। মোদ্দাকথা, জিনিসপত্রের দাম নিয়ে আমজনতার সাথে ‘কানামাছি’ খেলা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায়, এটা কারো জন্যই ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই একটা গোষ্ঠী ‘খেয়াল-খুশির বলি’ বানাতে শুরু করেছে সাধারণ জনগণকে। বছর দুয়েকেরে বেশি সময় অকিতান্ত হলেও হিতাহিত জ্ঞানের সাড়া মেলেনি; বিরতীহীন ধারাবাহিকতায় অপকর্ম-অপতৎপরতায় জনগণকে নাকাল করে চলেছে তারা। পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে তাদের অপতৎপরতার আঁচ অনুমান করতে পেরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে দুষ্কৃতিকারীদের অপচেষ্টাকে সাময়িক সময়ের জন্য রোধ করা গেলেও নিবৃত্ত করা যায়নি। ঈদ-উল-ফিতরের আগ দিয়ে শুরু হয় অপকর্মের জোর প্রচেষ্টা। এদের দেরৈাত্মে জনগণের সাথে সাথে সরকারও বেশ বিব্রত। সরকার ও সচেতন মহলের প্রশ্নের বিপরীতে একটার পর একটা ‘খোড়া যুক্তি’ দাঁড় করাচ্ছে তারা। এমনকি সূদূর প্রবাসে চলমান যুদ্ধের উত্তাপকে জনগণের গায়ে চাপাতেও কুন্ঠাবোধ তারা করেনি।
প্রতিটি জিনিসের দাম নিত্যনতুন মোড় নিচ্ছে নিত্যরোজ। বাজারে কোন জিনিসের দাম কমতির দিকে এ আলোচনা ভুলে কোন জিনিসের দাম কতদূর বাড়লো -এটাই আজকাল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে ‘অযাচিতভাবে’। সাম্প্রতিক সময়ে তরমুজ নিয়ে দেশবাসীকে যেভাবে নিস্ক্রীয় দর্শকে পরিণত করার ঘটনা ঘটানো হয়েছে, সভ্য সমাজের ইতিহাসে এ যেন এক ‘ট্র্যাজিক হিস্ট্রি’। সর্বশেষ ভোজ্য তেলের মূল্য এক লাফে ৪০ টাকা বাড়িয়ে আমজনতার কপালে চিন্তার রেখা এঁকে দিয়েছে এ অসাধু শ্রেণি।
সয়াবিন তেল নিয়ে জনগণের নাভিঃশ্বাস ওঠার মধ্যেই মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিতে ২০-৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপণ্যের দাম। মাংস ও সবজি স্বস্তি কেড়েছে অনেক আগেই। মানুষজন যখন অর্থকষ্টে আধপেটা অবস্থায় দিন পার করছে তখনও বাড়তি দামের আশায় গুদামে বন্দি চাল! বাজারে নতুন চাল এসেছে, তবে তা খুচরা পর্যায়ে এখনো সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। বাড়তি দামের আশায় বড় বড় আড়তদাররা নতুন চাল গুদামে মজুত করে রেখেছেন।
এভাবে বাজার যখন বেসামাল তখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত ছুটছে বাড়তি আয়রোজগারের আশায়। প্রতিটি সেক্টরে কর্মস্থানে অস্তিরতা বেড়েছে, কমেছে দৈনিক উপার্জন।
সরকারের পক্ষ থেকে ‘তদারকি’ করা হলেও এসব পরিস্থিতি থেকে স্বস্তির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নাভিশ্বাস বাড়ছে সব মানুষের। প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে এখন একই প্রশ্ন- ‘এভাবে আর কতদিন চলবে?’।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে আবার। চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধেরও ইতি ঘটছে না এখনই। বিশ্ব রাজনীতিও প্রতিদিন নতুন নতুন মোড়ে আবর্তন করছে। এসব ‘ইস্যু’ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বাড়াবে; ফলে স্বভাবতই এর ধাক্কা লাগবে প্রতিটি দেশে।
নিত্যপণ্য নিয়ে ছিনিমিনি শুরু করা অসাধু ব্যবসায়ী-সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম রুখতে সরকারকে নিতে হবে সতর্ক অবস্থান। মোদ্দাকথা, জিনিসপত্রের দাম নিয়ে আমজনতার সাথে ‘কানামাছি’ খেলা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায়, এটা কারো জন্যই ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।