logo
আপডেট : ১৫ মে, ২০২২ ১১:২৪
মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদনের জন্য উঠছে আগামী অর্থবছরের এডিপি
#মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য বাজেটে থাকছে বড় বরাদ্দ # রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ
মো. রেজাউর রহিম

মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদনের জন্য উঠছে আগামী অর্থবছরের এডিপি

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী বছরের নতুন এডিপি বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে উঠছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে আগামী অর্থবছরের এডিপি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু, রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল-চলমান এ তিনটি মেগা প্রকল্প এ বছর চালু হবে বলে আশা করছে সরকার।

প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন করতে এডিপিতে প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এডিপিতে। তবে এ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষের দিকে থাকায় আগের চেয়ে এসব প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ কমবে। অগ্রাধিকার পাওয়া অন্য মেগা প্রকল্পগুলো হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল (বঙ্গবন্ধু টানেল), বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটের এডিপি চূড়ান্তকরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে আগামী এডিপি থেকে প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপির পরিমাণ ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও পরে সংশোধনীতে (আরএডিপি) এর আকার দাঁড়ায় দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।

এদিকে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা, টাকার অঙ্কে যা দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে এডিপি বরাদ্দের ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভোরের আকাশকে বলেন, চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটির কাজ প্রায় সম্পন্নের পথে হওয়ায় আগামী বাজেটে বরাদ্দের চাপ অনেকটা কমছে। তবে এসব প্রকল্পসহ বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ এডিপিতে রাখা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী অর্থবছরে বাজেটে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য বড় বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আর আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মেগা প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই যোগাযোগ খাতের। এ খাতে মোট এডিপি বরাদ্দের প্রায় ৩০ শতাংশ রাখা হচ্ছে। এছাড়া দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অগ্রাধিকার এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তুলনামূলকভাবে কম বরাদ্দ দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, দেশকে দ্রুত পরিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরে সরকারেরর রূপরেখা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা জোরদারে আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও গৃহায়ণ খাত। এছাড়া করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার বিষয়টিকেও বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য পরে সংশোধনীতে বরাদ্দ কমিয়ে ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা করা হয়। আর আগামী অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এদিকে আগামী জুন মাসে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এজন্য আগামী অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য নতুন বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে এখনও কিছুটা সংশয় রয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া বাজেটে পদ্মা রেল সেতুর জন্য এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ কেটি টাকা। আর এ প্রকল্পের মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

এছাড়া চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে ২ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রথমে বেশি থাকলেও চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে সংশোধনী বরাদ্দের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা।

আর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আগামী অক্টোবরে এ টানেল উদ্বোধনের কথা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

বাজেটে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। চলতি বছর এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার ৩০০ কেটি টাকা। এছাড়া যমুনা নদীর ওপর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণে আগামী অর্থবছরের জন্য বছর বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে পায়রা সমুদ্রবন্দর কার্যক্রম পরিচালনা এবং বন্দরটির প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণ প্রকল্পের জন্য যথাক্রমে ৫১৩ কোটি টাকা ও ২৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এছাড়া আগামী বাজেটে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ১২০ কোটি টাকা।