ছোট একটি বাজার। ক্রেতাও হাতেগোনা কয়েকজন। বিক্রেতারা যে যার মতো বিভিন্ন সবজির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। দাম কষাকষি করে কিনছেন ক্রেতারা। তবে বাজারে অধ্যাপক ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্সকে কচুর লতি বিক্রি করতে দেখে অবাক হয়েছেন সবাই।
বিক্রেতাদের সারিতে তার কঢ়ুর লতি বিক্রির ছবি তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়। এতে সব মহলে প্রশংসায় ভাসেন তিনি।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুলের বাজারে লতি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন প্রিন্স। নিজের চাষ করা ১৬ কেজি লতির সবগুলোই বিক্রি করেন তিনি।
ছবিটি প্রথম শেয়ার করেন মো. হৃদয় নামে এক শ্রমিক। তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন- “আমাদের ড্রাগন বাগানের মালিক আজকে বাবুলের বাজারে তার নিজের ক্ষেতের লতি বিক্রি করছেন।”
এরপর পোস্টটি 'কৃষাণ কৃষি উদ্যোগ' ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করা হয়। প্রিন্সের ব্যবহার করা এই আইডি থেকে শেয়ার করে লেখা হয়-
“স্থানীয় বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি সেল করলাম, কেজি ৫০ টাকা। বাজারের সবচেয়ে দামি সবজি এখন। পাইকার বলেছিল ৪০ টাকা, দেই নাই। তবে লতির সম্ভবত জাত পাত আছে, আরেকটু মোটা সেগুলো একটু কম।”
“যদিও তিনজনের কাছ থেকে বাজার দামের থেকেও কম নিয়েছি, কারণ তাদের কাছে লতি কেনার তেমন টাকা ছিল না। লতিটা বিলের পাশের এলাকার একটা অভিজাত আইটেম, কারণ এখানে হরহামেশা গুড়া মাছ পাওয়া যায়। মনে হচ্ছিল ক্ষেতে এক মণ প্রডাকশন হলেও সেল হতো। এই সময় ধান কাটা কামলাদের হাতে টাকা থাকে।”
তাৎক্ষণিক তার এ লেখাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন ছবিটি নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছেন। যে যার মতো স্ট্যাটাস দিয়ে ভাইরাল করে দেয়। কমেন্ট করে প্রসংশার ঝড় তুলছে সবাই।
জানা যায়, প্রিন্সের দাদা বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুরে। তার বাবা ছিলেন একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারসহ ঢাকায় আর্মি কলোনিতে থাকতেন তিনি।
২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন প্রিন্স। এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ ডিগ্রি নেন ২০০৮ সালে।
২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে বর্তমানে বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান প্রিন্স।
কথা হলে ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতাম। কিন্তু কৃষির প্রতি ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড ভালোবাসা ছিল। আমরা ঢাকায় আর্মি কলোনিতে থাকাকালীন মা শখ করে কিছু লাউগাছ লাগাতেন, হাঁস পালতেন। এগুলো আমার অনেক ভালো লাগত। এসব দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। ফলে স্রী-সন্তান নিয়ে শশুরবাড়ী ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে কৃষি করতে চলে আসি।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৪ সালে এখানে ৮ একর জমিতে গড়ে তুলেছি কৃষি খামার। বেসরকারি ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছরের ছয় মাস ছুটি নিয়ে খামারে কৃষিকাজ করি।’
স্থানীয় বাজারে নিজে কচুর লতি বিক্রির বিষয়ে প্রিন্স বলেন, ‘নিজের উৎপাদিত পণ্য নিজে বিক্রি করার মাঝে লজ্জার কিছু নেই। এজন্য স্থানীয় বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি নিয়ে গিয়েছিলাম। বাজারে বসে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে আমাকে এমন অবস্থায় দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন। এটা ঠিক না। কারণ, আমরা সবাই মানুষ সেটাই বড় কথা।’
তিনি আরো বলেন, ‘কৃষিপ্রধান দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। বিষযুক্ত বিভিন্ন খাদ্যে সয়লাব বাজার। এজন্য বেকার শিক্ষিত যুবকসহ অন্যরা উদ্যোক্তা হিসেবে যেকোনো কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হতে পারলে নিজের পাশাপাশি দেশেরও লাভ হবে।’