logo
আপডেট : ১৫ মে, ২০২২ ১৭:২৬
অর্থনীতি নিয়ে সক্রিয় ও সতর্ক ভূমিকায় থাকা জরুরি
ড. নাজনীন আহমেদ

অর্থনীতি নিয়ে সক্রিয় ও সতর্ক
ভূমিকায় থাকা জরুরি

ড. নাজনীন আহমেদ

বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হচ্ছে কিনা নিয়ে বেশ ক’দিন ধরে আলাপ-আলোচনা জল্পনা-কল্পনা চলছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে এই মুহূর্তে তেমন আশঙ্কা নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা অর্থনৈতিকভাবে সব দিক থেকে খুব স্বস্তিতে আছি। বরং আমাদের নিজস্ব সমস্যাগুলো নিজেরা বুঝতে হবে এবং সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

কোভিডের প্রকোপ কমে গেলেও কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারের মূল্যস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গনের নানা অনিশ্চয়তা, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রস্তুতি-সব মিলিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।

বর্তমান সময়ে বিরাজমান মূল্যস্ফীতি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরে চাপ, রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন ঘাটতি পূরণে সক্ষম না হওয়া-ইত্যাকার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সেইসঙ্গে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের ধীরগতি সব মিলিয়ে আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

আমরা সাধারণভাবে মনে করি, এগুলো শুধু সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু জনগণের মধ্যে যারা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল, অর্থনীতির টানাপড়েন দূর করতে এবং উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে তাদের প্রঅ্যাকটিভ ভূমিকা খুব জরুরি, যাতে অর্থনীতির গতি সচল থাকে। সচেতন নাগরিক হিসেবে কিছু পদক্ষেপ আমরা এখনই নিতে পারি ।

১) জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ঢালাওভাবে ভ্যাট বা কর মওকুফ বা কমানোর আবেদন থেকে বিরত থাকতে হবে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা মনে রাখলেই বুঝতে পারবো কর দেওয়া কতটা জরুরি।

২) আয়করদাতাদের ঠিকমতো কর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আজকে কর ফাঁকি দিলে আগামীতে সংকটে পড়ব আমরা নিজেরাই।

৩) বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য কম ব্যবহার করতে হবে। দেশি পণ্য ব্যবহারে মনোযোগ দিতে হবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া তথা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকাতে আমাদের ভূমিকা এখন কম নয়। আমদানিনির্ভর বিলাস পণ্য ব্যবহার কমাতে হবে, অন্তত আগামী দুই বছর।

৪) যারা সক্ষম তারা আত্মীয়-স্বজন, স্বল্পআয়ের মানুষের মাঝে যথাসম্ভব অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করতে হবে। মূলত তাদের কর্মসংস্থানের সাহায্য করতে হবে। এক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি অরগানাইজেশনের সঙ্গে কাজ করা যেতে পারে।

৫) ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য কিনতে হবে যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে।

৬। সর্বোপরি সুশাসন দরকার। দুর্নীতি দূর না হলে, সুশাসন নিশ্চিত না হলে সম্পদের সদ্ব্যবহার সম্ভব নয়। তাতে উন্নয়নের অপচয় হয়।

সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিবেচনায় যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে সেটাই কাম্য। কিন্তু সেই সঙ্গে নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাদেরও। আমরা কিন্তু আর দরিদ্র দেশের নাগরিক নই। আমাদের আচার-আচরণে তাই প্রমাণিত হওয়া উচিত।

ড. নাজনীন আহমেদ, ইকোনমিস্ট, জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রাম-ইউএনডিপি।