logo
আপডেট : ১৬ মে, ২০২২ ১১:১৪
বিশ্ব স্পাইন দিবস আজ
এই রোগের উন্নত চিকিৎসা এখনো সীমিত
নিখিল মানখিন

এই রোগের উন্নত চিকিৎসা এখনো সীমিত

প্রতীকী ছবি

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে স্পাইনাল ডিডিজ বা স্পাইনাল ডিজকমফোর্ট সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা। এ সমস্যার চিকিৎসা খুবই স্পর্শকাতর ও ব্যয়বহুল উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, দেশে এই রোগের উন্নত চিকিৎসা এখনো সীমিত। জেলা পর্যায়ে এই রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ের চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ জীবনে কখনো না কখনো স্পাইন বা ব্যাকপেইনে ভুগে থাকেন। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে এ ধরনের রোগীদের বড় ধরনের জটিলতায় পড়তে হয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ২৩/২ নং হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন (৫৩) এক বছর ধরে স্পাইনাল ডিজকমফোর্ট রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) এক সপ্তাহের জন্য ভর্তি ছিলেন। তিনি ভোরের আকাশকে জানান, ‘গত ছয় মাস ধরে পঙ্গু হাসপাতালের এক অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছি। প্রেসক্রিপশনে সার্জারি করানোর পরামর্শ দেয়া রয়েছে। বর্তমানে ওষুধ খেয়ে যাচ্ছি। এ ধরনের সার্জারি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ওষুধ দিয়ে উন্নতি না হলে সার্জারি করোনোর বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে চিকিৎসক আমাকে জানিয়েছেন। কিছুদিন অপেক্ষা করে উন্নতি না হলে ভারতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি’ বলে জানান ইলিয়াস হোসেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন কুমিল্লার মুরাদনগর থানার মো. কামরুল হক (৪৫)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তিনি। অফিস শেষে মোটরসাইকেলে করে ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। তিনি ভোরের আকাশকে জানান, আঘাত পেয়ে মেরুদণ্ডে স্পাইন ফ্রাকচার (শিরদাঁড়ার হাড় ভাঙা)। মেরুদণ্ড সরে গেছে। অপারেশন করাতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি আরো জানান, কুমিল্লায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অপারগতা প্রকাশ করে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেছেন। ব্যথা কিছুটা কমলেও মূল সমস্যা রয়ে গেছে বলে জানান মো. কামরুল ইসলাম। এভাবে প্রতিদিন জেলাপর্যায় থেকে অসংখ্য স্পাইনাল ডিজকমফোর্ট রোগী উন্নত চিকিৎসাসেবার আশায় রাজধানীমুখী হচ্ছেন।

নিউরোস্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, স্পাইনাল ডিজকমফোর্ট সমস্যার চিকিৎসা খুবই স্পর্শকাতর ও ব্যয়বহুল। এ ধরনের রোগীরা শুরু দিকে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে যান। কিন্তু সাধারণ ওষুধ ও ব্যায়ামে সুস্থ হয়ে না উঠলে সার্জনের শরণাপন্ন হন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম সালেক ভোরের আকাশকে বলেন, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ জীবনে কখনো না কখনো স্পাইন বা ব্যাকপেইনে ভুগে থাকেন। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে এ ধরনের রোগীদের বড় ধরনের জটিলতায় পড়তে হয়।

রোগটির বিষয়ে তিনি বলেন, কেবল মেরুদণ্ড নয়, সংশ্লিষ্ট লিগামেন্ট-সংশ্লিষ্ট পেশির যে কোনো ‘অ্যাবনরমাল সিচুয়েশন’কে ‘স্পাইনাল ডিজিজ বা স্পাইনাল ডিজকমফোর্ট’ নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

মেডিসিন ও বাতব্যথা বিশেষজ্ঞ ডা. মো. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ বলেন, মেরুদণ্ড কেবল একটি হাড় নয়। অনেকগুলো ছোট ছোট হাড় বা কশেরুকার সমন্বয়। মাথা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে মেরুদণ্ডের উৎপত্তি। এর শেষ হয়েছে পশ্চাদ্দেশে। ঘাড়, পিঠ এবং কোমড় মেরুদণ্ডের এই তিন অংশ। মেরুদণ্ডের হাড়, দুই হাড়ের মাঝের ইন্টারভার্টিবাল ডিস্ক, লিগামেন্ট, মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের মাঝে যে স্নায়ু আছে এই সবকিছুর কোনো না কোনো সমস্যার জন্য মেরুদণ্ডের ব্যথা হতে পারে। বেশির ভাগ মানুষেরই এ ব্যথার অভিজ্ঞতা আছে। পজিশনগত কারণে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে। এমনটাই জানান ডা. মো. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ।

নিটোরের পরিচালক এবং বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির (বিওএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল গনি মোল্লাহ জানান, গত ঈদে প্রায় ৬০০ বাইক এক্সিডেন্ট কেস এসেছে শুধু নিটোরে। যার মধ্যে মৃত্যুহার আশঙ্কাজনক। যার মধ্যে স্পাইনাল ইনজুরি ৫ থেকে ৬ শতাংশ। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর পক্ষে সবাইকে চিকিৎসা সেবা দেয়া কঠিন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

অর্থোপেডিক, ট্রমা ও স্পাইন সার্জন ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল ভোরের আকাশকে বলেন, স্পাইনাল ইনজুরিকে বাংলায় বলে মেরুদণ্ডে আঘাত। এর মধ্যে রয়েছে কশেরুকা ভেঙে যাওয়া ও স্থানচ্যুত হওয়া। মেরুদণ্ডে কী থাকে স্পাইনাল কর্ড, হাড় যা স্পাইনাল কর্ডকে সুরক্ষা দেয় (একে বলে ভার্টিব্রা বা কশেরুকা), দুই কশেরুকার মাঝখানে চাকতিসদৃশ ডিস্ক, ঘিরে থাকা মাংসপেশি এবং স্পাইনাল কর্ড থেকে বেরিয়ে আসা নার্ভ বা স্নায়ু। যদি কারো স্পাইনাল ইনজুরি হয় তাহলে সবচেয়ে বড় যে ঝুঁকি থাকে তা হলো তার স্পাইনাল কর্ড অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি সে রকম কিছু ঘটে তাহলে আঘাতের স্থানের নিচ থেকে রোগীর শরীর প্যারালাইসড বা অসাড় হয়ে যায়। দেশে স্পাইনাল ডিডিজে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানান ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল।