logo
আপডেট : ১৬ মে, ২০২২ ১১:২৩
জটিলতা আছে, ফেরত আনতে কোনো বাধা নেই : টিআইবি
জুনায়েদ হোসাইন

জটিলতা আছে, ফেরত আনতে
কোনো বাধা নেই : টিআইবি

আলোচিত দুর্নীতিবাজ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার এবং তার ৫ সহযোগীকে ভারতে পশ্চিমবঙ্গে আটকের পর তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ভারত সরকার তাদের বিচারের আওতায় নেওয়ায় অভিযুক্তদের বাংলাদেশে ফেরত আনা জটিল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের আকাশকে জানান, অপরাধী বা অভিযুক্তদের ফিরিয়ে আনা এবং তাদের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা চট করে সম্ভব হবে না। তবে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিশেষ সংস্থা এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপের সক্রিয় যোগাযোগের মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

এদিকে আলোচিত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার এ দুর্নীতির কাণ্ডের পর থেকে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। এ কাণ্ডে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে ৩৪টি মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অন্য ৭টি মামলায় পিকে হালদারকে আসামি করা হয়নি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পিকে হালদারকে দেশে ফের আনতে অনেকগুলো বিষয় আছে। বিশেষ করে পিকে হালদার এবং তার সহযোগীদের জালিয়াতি, অনিয়মের কারণে আটকের বিষয়টি জবাবদিহির একটি পদক্ষেপ মাত্র। এখন ফিরিয়ে আনার বিষয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ভারতে সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংস্থা; বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিশেষ সংস্থা এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু বিষয়টি একটু জটিল। যেকোনো অর্থ পাচার মামলা পৃথিবীর সব দেশেই চট করে সমাধান করা যায় না, চট করে অর্থ ফেরত আনা যায় না। এখন বিষয়টি আরো বেশি জটিল হয়েছে এজন্য যে, পিকে হালদার বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে। সেখানে তারা এ অবৈধ অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে তারা সেখানে বিভিন্ন দলিল জাল-জালিয়াতি করেছে। যার ফলে তারা ভারতিয় আইন লঙ্ঘনের কারণে তাদের অভিযুক্ত করা হবে। ভারত তাদের প্রথমে জবাবদিহিতায় আনতে চাইবে। এক্ষেত্রে ভারত, কোনটি গুরুত্ব দেবে? তাদের আইনে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ফেরত পাঠানো। কাজেই ভারত তাদের আইনে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা নিশ্চিত করার কারণে বিষয়টি আরো বেশি জটিল হয়েছে।

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, তাদের আন্তর্জাতিক আইনুয়ায়ী অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই যেসব সংস্থার কথা বলেছি, তাদের অন্যসব বিষয় মধ্যে এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। যার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমি বলব, যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে অপরাধী বা অভিযুক্তদের ফিরিয়ে আনা এবং তাদের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে আবারো বলছি, এটি চট করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, পিকে হালদার ভারতে অবস্থানকালে শিব শঙ্কর নামে বসবাস করতেন। নাম পরিবর্তন এবং নাগরিকত্ব নিয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে কোনো জটিলতা দেখা দেবে কিনা? এ প্রসঙ্গে টিআইবি বলছে, নাম পরিবর্তন করাটাও জালিয়াতি। তিনি যদি আরো দশটি দেশের নাগরিত্ব নিয় থাকে তাতেও কিছু যায়-আসে না। কারন তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট যে, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আছে, তাতে আন্তর্জাতিক আইন ও দেশের আইনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে তিনি যদি আরো ১০টা দেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে থাকেন, তাতেও কিছু যায়-আসে না।