দেশে-বিদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্যসংবলিত ডাটাবেজ তৈরি করছে সরকার। সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রশাসনিক গতিশীলতা আরো জোরদার করাই এর মূল লক্ষ্য। আর এ ডাটাবেজ প্রস্তুত হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্টের (এসিআর) পরিবর্তে চালু হবে অ্যানুয়েল পারফরম্যান্স অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট (এপিএআর)। এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ণের কাজও চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশকে পরিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের বর্তমান সরকারের রূপরেখা বাস্তবায়ন অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ওপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী চলছে এক ধরনের অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এ অবস্থায় দেশের প্রশাসনকে আরো বেগবান ও গতিশীল করতে এবং সৎ, দক্ষ ও যোগ্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঠিক পদে পদায়নের জন্য যথাযথ তথ্যসংবলিত ডাটাবেজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দক্ষ ও যোগ্যদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো এবং অযোগ্যরা যাতে গুরুত্বপূর্ণ পদে না যেতে পারেন, সে বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য এ ডাটাবেজ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, তথ্যসংবলিত ডাটাবেজে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি জীবনের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের দক্ষতার বিবরণ, ব্যক্তিগত ও পেশাগত মূল্যায়নের তথ্যও রাখা হবে। এ ডাটাবেজের সঙ্গে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বদলির বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট থাকবে। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ শুরুও করেছে।
জানা গেছে, মূল্যায়নের জন্য এসিআরের পরিবর্তে এপিএআর চালু করা হবে, যা হবে অনলাইনভিত্তিক। আর প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীর জন্য একটি করে অনলাইন অ্যাকাউন্টও করা হবে। এতে চাকরিজীবনের শুরু থেকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে। এছাড়া অ্যাকাউন্টধারীর বিদেশ সফর, স্বাস্থ্যগত অবস্থাসহ অন্যান্য তথ্যও এতে উল্লেখ থাকবে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম ভোরের আকাশকে বলেন, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে আধুনিক ও আরো গতিশীল ও জনবান্ধব করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরে সরকারের রূপরেখা বাস্তবায়নে সৎ, মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি ও সঠিক পদায়নের জন্য আধুনিক ডাটাবেজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, এজন্য সব কর্মচারীর ব্যক্তিগত ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে এবং এটি সম্পন্ন হলে মূল্যায়নের জন্য এসিআরের পরিবর্তে এপিএআর সিস্টেম চালু করা হবে। এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ, দক্ষতা ও যোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন-এসিআর করা হয়। সাধারণত সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এটা প্রস্তুত করে থাকেন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাটাবেজ সম্পন্ন হলে এসিআরের পরিবর্তে পরিবর্তে চালু হবে এপিএআর। এছাড়া বর্তমানে চালু এসিআরের সময়কাল জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হলেও এপিআরএ’র সময়কাল হবে জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ অর্থবছরকেন্দ্রিক।
উল্লেখ্য, বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যায়নের জন্য এসিআর নিয়ে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি ও আতঙ্ক রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই এসিআরের চূড়ান্ত মূল্যায়ন করে থাকেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দেশের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডকে আরো গতিশীল করতে এবং প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্যই এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী দেশে ১৮ লাখ ২১ হাজার ২৮৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে বর্তমানে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন।