নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থপাচারসহ সব কেলেঙ্কারির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারতে গ্রেফতার প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। সেই সঙ্গে যে কোনো মূল্যে তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান বলেও জানিয়েছেন। সোমবার (১৬ মে) মেডিকেল চেকআপের পর পশ্চিমবঙ্গে ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট (ইডি) কার্যালয়ে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের কাছে দেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানান তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যে। আমি দেশে ফিরতে চাই। ভারতে গ্রেফতারের পর পি কে হালদার এখনও রিমান্ডে আছেন।
পিকে হালদারসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দফায় দফায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বলে জানা গেছে। তবে রোববার প্রথম দিনের রিমান্ডের পর সোমবার তিনি অনেকটাই সামলে উঠেছেন।
এদিকে, আইন অনুযায়ী রিমান্ডে থাকা আসামিদের প্রতি ২৪ ঘণ্টায় চেকআপ করা বাধ্যতামূলক। সেই নিয়ম অনুযায়ী গতকাল পি কে হালদারের মেডিকেল চেকআপ করা হয়। চেকআপ শেষে ইডি কার্যালয়ে ফেরার পথে তাকে অনেকটাই সুস্থ দেখা গেছে।
জানা গেছে, আজ ১৭ তারিখ ৫ জনকে আদালতে তোলা হবে। তবে, তার আগে মূলত আধিকারিকরা জানিয়েছে যে, তাদের আর কোথায় কোথায় সম্পত্তি বা ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশাপাশি তাদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে যে টাকা লেনদেন হতো তার উৎস কোথায়? মূলত ছুটির কারণে ১৫ তারিখ এবং ১৬ তারিখ দু’দিন ব্যাংক বন্ধ। যে কারণে পিকে হালদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে যে লেনদেন হতো তা ১৭ তারিখের আগে যদি না জানা যায় আবারও পিকে হালদারসহ বাকি গ্রেপ্তারকৃতদেরকে হেফাজতে নিতে পারে ইডি।
আর্থিক বাজেটে পাশাপাশি দুই দেশের ভুয়া নথিপত্র, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজশের একাধিক বিষয় রয়েছে, যে বিষয়গুলো ইডির এখতিয়ারের বাইরে অর্থাৎ ইডি শুধুমাত্র আর্থিক সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। তাই ইডির তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এদেরকে সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করতে পারে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে।
অন্যদিকে পিকে হালদার নিজের দেশে ফিরতে চাইছে পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও পিকে হালদারসহ বাকি গ্রেপ্তারকৃতদের নিজের দেশে ফেরানোর জন্য আবেদন জানিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদেরকে যদি নিজের দেশে ফিরতে হয় তাহলেÑ আর্থিক তছরূপ, ভুয়া নথিপত্র নিয়ে ভারতে বসবাস করা, এছাড়াও বেআইনি সম্পত্তি গড়ে তোলাসহ একাধিক অপরাধ করেছে, তার সাজা খাটতে হবে ভারতে।
গত ১৪ মে দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের আশোকনগর থেকে পি কে হালদার, তার আইনজীবী সুকুমার মৃধাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ভারতের ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট (ইডি)।
পি কে হালদারের গ্রেপ্তারে ভারতকে ধন্যবাদ জানানো উচিত : হাইকোর্ট
এদিকে পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।
সোমবার (১৬ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. কাজী মো. এজারুল হক আকন্দর বেঞ্চ এ কথা বলেন।
তারা বলেন, আমাদের বার্তা পরিষ্কার যে, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্ট। কোনো দুর্নীতিবাজ বা অর্থ পাচারকারিকে ছাড় দেওয়া হবে না। পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়টি গতকাল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক হাইকোর্টে তুললে বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।
পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্যে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর করা মুলতবি স্বতঃপ্রণোদিত (স্বেচ্ছাসেবী) রুলের শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্যও উচ্চ আদালতকে অনুরোধ করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত জানিয়েছেন, বিষয়টি মঙ্গলবারের শুনানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর বিচারপতি মো. নাজমুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ জানতে চায়, পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
২০১৯ সালে দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় পি কে হালদার স্পটলাইটে আসেন। তিনি এবং তার সহযোগীরা ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এই ৪টি প্রতিষ্ঠান তখন থেকে ভয়াবহ সংকটে আছে এবং এদের মধ্যে পিএলএফএস এখন লিকুইডেশনের প্রক্রিয়ায় আছে। এই ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দেওয়া তহবিল পুনরুদ্ধার করতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
দুদকের একজন তদন্তকারী জানান, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তারা হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তারা শিগগির পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলার চার্জশিট দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, হালদারের স্যালারি অ্যাকাউন্টে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা পাওয়া যায়। তিনি ঋণ জালিয়াতির সুবিধার্থে কমিশন হিসেবে এই অর্থ নিয়েছিলেন।
পি কে হালদার চারটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এমন কৌশলে পরিচালনা করেছেন যে, হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আগে কেউ কিছু সন্দেহ করতে পারেননি।
হালদার তার লোকদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষে বসান। যেন তিনি সহজেই তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারেন এবং তহবিলের অপব্যবহার করতে পারেন।