সব ধরনের দূষণরোধে সরকার জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে। এর অংশ হিসেবে বায়ু দূষণ কমাতে উন্নত চূলার ব্যবহার, ইটের বিকল্প ব্লক ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পানি ও শিল্প দুষণ রোধে বর্জ্য শোধানাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাটি থেকে বিপদজনক রাসায়নিক অপসারণের জন্য জোরালো ভুমিকা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, জীববৈচিত্র, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূমি ক্ষয় সংক্রান্ত বৈশ্বিক চাপের পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলার জন্য সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সোমবার (১৬ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছয় বছরে এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইফনিট এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৫২ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এক লাখ চল্লিশ হাজার হেক্টর পাহাড়ি ও শাল বনাঞ্চলও পুনঃবনায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, এর আগে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় একত্রিশ হাজার হেক্টর ব্লক প্ল্যান্টেশন এবং প্রায় চব্বিশ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ প্ল্যান্টেশন করা হয়েছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে বনাঞ্চলের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ শতাংশ অর্জন করতে, বনায়ন, পুনঃবনায়ন, পুনরুদ্ধার, এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে দরিদ্র এবং বননির্ভর লোকদের জড়িত বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার দূষণ কমাতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে। বায়ু দূষণ কমাতে ৬৪টি জেলায় ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন উন্নত রান্নার চুলা স্থাপন করা হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সমস্ত সরকারি নির্মাণে ব্লক ইট ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। শিল্প পানি দূষণ রোধ করার জন্য, বর্তমানে শিল্পগুলির বর্জ্য শোধনাগার কভারেজ ৮২ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। মাটি থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক অপসারণের জোরালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিডিটি মজুদ ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। পুরানো ট্রান্সফরমার থেকে পলিক্লোরিনযুক্ত বাইফেনাইলগুলি ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বের করা হবে।
বনমন্ত্রী বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য, ২০২০ সালে তিনটি ডলফিন অভয়াশ্রম এবং একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১ সালে একটি জাতীয় উদ্যান এবং ১ টি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভূমি সংরক্ষণের জন্য, উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ইকো-রিস্টোরেশন, বৃহত্তর রংপুর জেলায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন, খরা প্রবণ বরেন্দ্রভূমি এবং হাওর জলাভূমি এলাকায় বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং আলোচক হিসেবে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরি বক্তৃতা করেন।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুল হক চৌধুরী প্রমুখ।