logo
আপডেট : ১৭ মে, ২০২২ ১৪:২৬
হাওড়ের কৃষকদের দুর্দশা লাঘব ও শষ্য নিরাপত্তায় বিএনপি ৮ সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

হাওড়ের কৃষকদের দুর্দশা লাঘব ও শষ্য নিরাপত্তায় বিএনপি ৮ সুপারিশ

হাওড়ের কৃষকদের দুর্দশা লাঘব ও শষ্য নিরাপত্তা রক্ষায় ৮ টি সুপারিশ করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশসমুহ উপস্থাপন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, চলতি মওসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ভেসে গেছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ কয়েকটি জেলার হাওড়ের লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল। সেই সাথে ভেসে গেছে প্রান্তিক সেসব জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

হাওড় এলাকার সাড়ে ১২ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে কেবল একটি ফসল হয় জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিন্তু পাহাড়ী ঢলের কারণে কোন বছর সেটি তলিয়ে গেলে সারাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। হুমকিতে পড়ে জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে ঢুকে পড়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ জেলায় পাহাড়ী ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ের বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি ঢলের পানির চাপে ভাটি এলাকার বাঁধও এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ১৯টি হাওড়ে বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার তাহিরপুর, শাল্লা, দিরাই, ধর্মপাশা, মধ্যনগর উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বছরের একটি মাত্র ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ায় এখন সর্বশান্ত ও দিশেহারা হাওড়ের কৃষিজীবী মানুষ। সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে এসব উপজেলায় ৫৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গিয়ে এপর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। তবে কৃষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা, হাওড় বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ইউপি চেয়ারম্যানগণ জানায় এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

নেত্রকোণায় মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির কারণে খালিয়াজুরি’র ধনু নদীর পানিতে ডুবে গেছে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

মির্জা ফখরুল বলেন, চলতি বছরে সুনামগঞ্জ জেলায় বাঁধ নির্মাণে সরকারী বরাদ্দ ছিল ১২২ কোটি টাকা এবং গত ৫ বছরে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৬২১ কোটি টাকা, যা বাঁধ রক্ষায় তেমন কোন কাজে আসেনি। বরং এই বরাদ্দকৃত টাকা ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপি, সরকারী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা এই টাকা হরিলুট করেছে। যে সমস্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা এতই দুর্বল যে, মাত্র ২৪ ঘন্টার পানির চাপ সামলাতে পারেনি। প্রতি বছর এভাবে বাঁধ নির্মাণের নামে হাওড় অঞ্চলে সরকারী অর্থ লুটের মহোৎসব চলে। এর ফলে কৃষকরা হয় সর্বশান্ত, অপরদিকে সরকারী দলের লোকজন ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা হয় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার হাওড় বাঁচাও আন্দোলন কমিটির গবেষণা সূত্র অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলায় ৭২২টি বাঁধের মধ্যে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১০৮টি বাঁধের ওপর পরিচালিত জরিপের ফল অনুযায়ী মাত্র ৮ শতাংশ বাঁধে মাটির কাজ সম্পন্ন হয়, ঘাস লাগানো হয় মাত্র ৩ শতাংশ বাঁধে। সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার দুর থেকে বাঁধ নির্মাণের মাটি আনার কথা থাকলেও ৩৫ শতাংশ বাঁধেই এই নিয়ম তোয়াক্কা করা হয়নি। সরকারী হিসাব অনুযায়ী সুনামগঞ্জে মোট ১৭১৮ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু দেশের হাওড় অঞ্চলই নয়, এই চিত্র দেশের সার্বিক কৃষি সেক্টরে। বর্তমান অবৈধ সরকারের আমলে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ এখনও সরাসরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য-বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে তেমন কোন উদ্যোগ বা তৎপরতা নেই। আওয়ামী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনগণের নিকট তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই। তারা সবসময় ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে বলেই জনকল্যাণে কোন কাজ করে না। যার ফলে তাদের শাসনামলে বাংলাদেশের কৃষক সমাজ সবসময়ই বঞ্চিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত থেকেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কৃষকদলের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়াঞ্চল সরেজমিনে পরিদর্শন ও কৃষকদের দুর্দশার চিত্র দেখে এসেছেন। সরকারী দুর্নীতিরোধ, হাওড়ের কৃষকদের দুর্দশা লাঘব ও শষ্য নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের কতিপয় সুপারিশ তুলে ধরছি।

সুপারিশ সমূহ:

১। হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে। এই দুর্নীতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

২। বছর বছর বাঁধ নির্মাণ না করে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তৈরীকৃত ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

৩। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা সুদে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। ঋণগ্রস্ত কৃষকের ঋণের সুদ মওকুফ এবং স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি নেয়া বন্ধ করতে হবে।

৫। হাওড় অঞ্চলে শষ্য বীমা চালু করতে হবে।

৬। হাওড় অঞ্চলের কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য গণমূখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।

৭। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৮। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।