logo
আপডেট : ১৮ মে, ২০২২ ১১:৩৫
আসছে প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকার মেগা বাজেট
মো. রেজাউর রহিম

আসছে প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকার মেগা বাজেট

প্রতীকী ছবি

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার মেগা বাজেট আসছে।

দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম বাজেট হবে এটি, যা মোট দেশজ উপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বাস্তবায়ন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার।

এ ছাড়া দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশকে দ্রুত পরিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরে সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নের বিষয় বাজেটে প্রাধান্য পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। দারিদ্র্যবিমোচনকে বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা ও পদক্ষেপ রাখা হচ্ছে বাজেটে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

এ হিসেবে আগামী বাজেটে জিডিপির আকার ২ শতাংশ কমছে। তবে নতুন অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।

যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার কর্মকর্তারা জানান, আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভর্তুকিও বাড়ছে। ভর্তুকির টাকা যোগাতে এবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে বাজেটের মোট আকার শেষ মুহূর্তে কিছু বাড়তে-কমতে পারে। এ ছাড়া আসন্ন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

আগামী র্অথবরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্যবিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ণের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, করোনা- পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বাস্তবায়ন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের দিকনির্দেশনা রাখা হচ্ছে।

এ ছাড়া সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়নের বিষয়কেও আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ)।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নতুন বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার কোটি টাকা।

আর কর-বর্হিভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ দুই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার কোটি ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৩ শতাংশ ও ৫ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক কল্যাণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, অবসর ও পারিবারিক ভাতা এবং অন্যান্যসহ মোট ছয় খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

আগামী বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।

আগামী বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে ১৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

আগামী বছরের বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।

কর্মসৃজন খাতে নতুন বাজেটে ১৯ হাজার ৭০০ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।

অবসর ও পারিবারিক ভাতায় নতুন বাজেটে ২৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া নতুন বাজেটে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে বরাদ্দ এ খাতে বরাদ্দ রয়েছ ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আগামী অর্থবছরে সুফলভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন বাজেটে সুফলভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৮ লাখে।

এই কর্মসূচির আওতায় নতুন আরো ১০০ উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তবে এ কর্মসূচিতে বয়স্ক ও বিধবাদের ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ আগের মতই মাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা রাখা হচ্ছে।

এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি দেওয়া হয় এমন খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ খাত ১৮ হাজার কোটি টাকা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ৩০০ কোটি, খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি এবং কৃষি খাতে প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে বলে জানা গেছে।