গমের বাণিজ্যিক রপ্তানির ওপর গত ১৩ মে থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।
তবে প্রতিবেশী দেশগুলো চাইলে ভারত থেকে গম আমদানি করতে পারবে।
এছাড়াও রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যে চুক্তিবদ্ধ গমের চালানের ক্ষেত্রেও কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
গত রোববার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানোর পরও দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি ভারতীয় গমের দাম বেড়েছে ১৩০ টাকা।
অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এবার গমের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী।
পাইকারি বাজারে গমের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখন এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি।
তেলের দাম নিয়ে নতুন করে বলার অবকাশ নেই। এর মধ্যে দেখলাম পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গমের বাজার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পরপরই এক দফা বেড়েছিল।
এখন ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে গমের দাম।’
তিনি বলেন, ‘ভারত গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর গমের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
কারণ যেসব গম বর্তমানে ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে রয়েছে সেগুলো তো আগেই আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আসলে মূল কথা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা কোনো একটা অজুহাত পেলেই সাথে সাথে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
এ বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের তদারকি করা উচিত।’
ভারতীয় গম রপ্তানি বন্ধের অজুহাতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি ভারতীয় গমের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ মে প্রতি মণ ভারতীয় গম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩৯০ টাকায়।
১৪ মে সেই গম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫২০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গমের বাজার বাড়তে শুরু করে।
ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম গম রপ্তানিকারক দেশ। দেশ দুটোর বিকল্প হিসেবে গম আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়।
অবশ্য ভারত ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আর্জেন্টিনা থেকেও গম আমদানি করা হয়। সেইসব দেশের গমে খরচসহ দাম পড়ছে প্রতি মণে এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত।
ভারতের গম কম আমিষযুক্ত। পক্ষান্তরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আর্জেন্টিনার গম বেশি আমিষযুক্ত।
তাই ময়দা তৈরিতে এই গম বেশি ব্যবহৃত হয়। এখন গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ময়দা ও আটাসহ বেকারি পণ্যের দামও বেড়ে যাবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার কানাডায় গমের উৎপাদন কম হওয়ায় পর্যাপ্ত রপ্তানি করতে পারছে না দেশটি।
ভারত গত বছরও একবার গম রপ্তানি বন্ধ করেছিল। কারণ, গমের মজুত কমে যাওয়ার ফলে বাজার ঠিক রাখার জন্য ভারত এই ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে।
এখন আবার ভারত তাদের নিজেদের বাজার ঠিক রাখার জন্য গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে গমের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে।