# রাজধানীর সহনীয় শব্দের মাত্রা ৩৫ থেকে ৭৬ ডেসিবল # এই হর্নে শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবল পর্যন্ত # চালকদের ঔদ্ধত্য বাড়িয়ে দেয় এই হর্ন # হুটার বা সাইরেনের ব্যবহারও অস্বস্তির কারণ
গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও হরহামেশাই চলছে এর ব্যবহার।
উচ্চশব্দে হর্ন বাজিয়ে ছুটে চলছে পাবলিক ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যাবহারকারীরা। কোনো প্রতিকার নেই। উচ্চশব্দে মানুষের শ্রবণশক্তির ওপর মারত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, হাইড্রোলিক হর্নে ১২০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ উৎপাদন করে। অথচ মানুষের সাধারণ সহ্য ক্ষমতা ৩৫ থেকে ৭৫ ডেসিবলের মধ্যে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান এলাকায় উচ্চমাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী পরিবহণের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিআরটিএ।
অভিযানে একটি প্রাইভেট কারকে আটক করা হয়। পরে সেটির হর্ন পরীক্ষা করা হয়।
প্রাইভেট কারটি বেশ পুরোনো হলেও ‘মোডিফাই’ করে বসানো হয়েছে হাইড্রোলিক হর্ন। পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রাইভেট কারটিতে ১০২ ডেসিবেল শব্দ ধরা পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে হাইড্রোলিক হর্ন হচ্ছে উচ্চমাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী বিশেষ হর্ন। আমেরিকান স্পিচ অ্যান্ড হেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানুষের জন্য শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল।
কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত, যা জনস্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি।
তাদের মতে হাইড্রোলিক হর্নের যন্ত্রণার পাশাপাশি উচ্চশব্দের হুটার বা সাইরেনের অহেতুক ব্যবহার মানুষের অস্বস্তির কারণ হচ্ছে।
হাইড্রোলিক হর্ন চালকদের ঔদ্ধত্য বাড়িয়ে দেয়। তাদের বেপরোয়া করে তোলে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার অভিযানে মোট ৮টি গাড়িতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত শব্দের হর্ন খুলে রাখা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘এটা উচ্চশব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যেসব গাড়িতে এসব উচ্চশব্দের হর্ন পাওয়া যাচ্ছে সেটি খুলে নেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি জরিমানাও করা হচ্ছে। এছাড়া হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার না করা এবং শব্দদূষণের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশে^র শব্দদূষণের মাত্রার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে রাজধানীর ঢাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে দিনের বেলায় কোথাও দূষণের এই মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নেই।
আইনে এলাকা ভেদে সর্বোচ্চ শব্দের মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৩৫ থেকে ৭৫ ডেসিবল পর্যন্ত।
এর মধ্যে নীরব এলাকার জন্য সর্বনিম্ন শব্দমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ ডেসিবল পর্যন্ত। আর বাণিজ্যিক এলাকায় এই মাত্রা ৬৫ থেকে ৭৫ ডেসিবলের মধ্যে।
অথচ দেখা গেছে, নীরব এলাকায় রাতে নির্মাণকাজে শব্দে ঘুমানো যায় না। দিনের বেলায় গাড়ির হর্নের উচ্চশব্দে বাঁচা দায় হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাংলামোটর, নবাবপুর, ধোলাইখাল এলাকায় গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানগুলোতে হরদম এ ধরনের নিষিদ্ধ হর্ন বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, বিগত চার বছরের হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য ও শ্রবণের জন্য ক্ষতিকর বলে উচ্চ আদালতে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন আদালত।
তখন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশকে। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে গাড়ির মালিক ও চালকদের কাছের থানায় হর্ন জমা দিতে এবং এই হর্ন ব্যবহার করা গাড়ি জব্দ করতেও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু এই নির্দেশ আজো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এখনো হরহামেশা হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার চবলছে রাজধানীজুড়েই।