logo
আপডেট : ১৮ মে, ২০২২ ১৭:৪৭
‘সাংসদ’ শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ চেয়ে রিটের আদেশ রোববার
নিজস্ব প্রতিবেদক



‘সাংসদ’ শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ চেয়ে রিটের আদেশ রোববার

জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের ক্ষেত্রে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দের পরিবর্তে ‘সাংসদ’ শব্দ না লেখার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর বুধবার (১৮ মে) হাইকোর্টে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২২ মে (রোববার) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

এদিকে বুধবার শুনানিতে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার পক্ষে ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান আদালতকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানোর পর থেকে আর ‘সাংসদ’ শব্দ লেখা হচ্ছে না। এরপর থেকে সংসদ সদস্য লেখা হচ্ছে।

জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের ক্ষেত্রে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দের পরিবর্তে ‘সাংসদ’ শব্দ না লেখার নির্দেশনা চেয়ে গত ১৬ মে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের। মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন (এলএলএফ) ট্রাস্টের পক্ষে ওই তিন আইনজীবী রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনে অসাংবিধানিক শব্দ ‘সাংসদ’ লেখার মাধ্যমে সংবিধান লংঘনের অপরাধে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশককে বিচারের মুখোমুখী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বুধবার এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। প্রথম আলো পত্রিকার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।

ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব শুনানিতে বলেন, আমাদের সংবিধানে ‘সাংসদ’ বলে কোনো শব্দ নেই। জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদটির নাম ‘সংসদ সদস্য’। সংবিধানের ৬৫ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭২ সালে প্রণীত ওই সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের ৩ দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।’ সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা রয়েছে। অথচ দৈনিক প্রথম আলো বছরের পর বছর ধরে ‘সাংসদ’ শব্দ লিখে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে স্পিকার ‘সাংসদ’ শব্দ না লিখতে রুলিংও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও সংবিধান লংঘন ও মাননীয় স্পিকারের রুলিং উপেক্ষা করে অব্যাহতভাবে ‘সাংসদ’ লেখা হচ্ছে ওই পত্রিকায়।

এ সময় তিনি বেশ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পত্রিকাটিতে গত ২২ এপ্রিল ‘সাংসদ একরামুলের বাড়িতে ইফতারে যাওয়ায় যুবলীগ নেতাকে হাতুড়ি পেটা’; একইদিন ‘পুলিশের আশ্বাসে গাংনীতে সাংসদের হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার’; ১৯ এপ্রিল ‘যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির প্রথা বৈষম্যমূলকঃ সাংসদ শহীদুজ্জামান’; ১৭ এপ্রিল ‘চাঁদা না পেয়ে সরিষাবাড়িতে খাল খনন বন্ধের অভিযোগ সাংসদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে’; গত বছর ১০ ডিসেম্বর ‘সাংসদ মুরাদকে ইউনিয়ন আ.লীগের সদস্য থেকে অব্যাহতি; শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যা সংবিধানের ৭ এবং ১৫৩(৩) নম্বর অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লংঘন।

তিনি বলেন, অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে 'জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রাখা, ইহার সংরক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য।' অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মান্য করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সর্বমোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদের 'সংসদ সদস্য' হিসেবে অভিহিত করতে হবে। ইহা একটি সাংবিধানিক পদ এবং সংসদ সদস্যদের অন্যকোনো নামে সম্বোধন করা অসাংবিধানিক। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার কর্তৃক রুলিং জারি করে বলা হয়েছে 'সংসদ সদস্য' একটি সাংবিধানিক পদ এবং 'সাংসদ' শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা দীর্ঘদিন যাবৎ 'সংসদ সদস্য' শব্দ ব্যবহার না করে 'সাংসদ' শব্দ ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা অব্যাহতভাবে অসাংবিধানিক 'সাংসদ' শব্দ ব্যবহার করে দেশ বিদেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশ সংবিধানের চরম লংঘন, অবমাননা এবং চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ) অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

তিনি বলেন, সংবিধান মান্য করা প্রথম আলোসহ সকলের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে প্রথম আলো ব্যর্থ হয়েছে। ইতিপূর্বে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে এসব বিষয় উল্লেখ করে 'সাংসদ' শব্দ ব্যবহার না করে 'সংসদ সদস্য' শব্দ ব্যবহারের জন্য প্রথম আলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক এবং প্রকাশককে অসাংবিধানিক শব্দের ব্যবহারের জন্য জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। এছাড়াও পাঠকদের উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রথম আলো যাতে অসাংবিধানিক শব্দ ’সাংসদ’ ব্যবহার না করে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অপর বিবাদীদের অনুরোধ করা হয়েছিল। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে অপর বিবাদীদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৭ এপ্রিল একই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ১০ বিবাদীর কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ওই তিন আইনজীবী। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিস্টরা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গতকাল রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদনে দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, সংস্কৃতি সচিব, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।