বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অনাকাক্সিক্ষত এক ঘটনার কারণে খেলা হয়নি নোভাক জকোভিচের। যে কারণে শিরোপা ধরে রাখার মাধ্যমে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড গড়া হয়নি। পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর অনুপস্থিতির সেই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে জকোভিচের স্বপ্ন নিজের করে নিয়েছিলেন রাফায়েল নাদাল। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মাধ্যমে রজার ফেদেরার ও জকেভিচকে পিছনে ফেলে রেকর্ড ২১টি স্ল্যাম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখান এই স্প্যানিয়ার্ড। এবার ফ্রেঞ্চ ওপেনের মাধ্যমে সেই স্বপ্নকে আবারো চাঙা করে তুলতে চান সার্বিয়ান তারকা জকোভিচ।
২০২১ সালে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ উইম্বলডন শিরোপার পর প্যারিসে দ্বিতীয় রোলা গাঁরো শিরোপা জয় করেছিলেন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় জকোভিচ। আর এর মাধ্যমে ফেদেরার ও নাদালের সাথে সর্বোচ্চ ২০টি স্ল্যাম জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেন। কিন্তু করোনা ভ্যাক্সিন জটিলতায় মেলবোর্নে গিয়েও কোর্টে না নেমেই দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল জকোভিচকে। আগামী রোববার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বছরের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফ্রেঞ্চ ওপেনের আসর। ঐদিনই জকোভিচ ৩৫ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন। ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে জকোভিচ বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমি যে পরিস্থিতিতে আছি তা আগে কখনোই অনুভব করিনি। যে পরিমাণ চাপ আমাকে বছরের শুরুর দিকে কয়েক মাস নিতে হয়েছে তা অকল্পনীয়। ব্যক্তিগত জীবনে বা ক্যারিয়ারে আমি যখনই চাপ অনুভব করেছি তখনই পুরো বিষয়টা এক ভিন্ন পর্যায়ে চলে গেছে।’
২০২২ সালে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি টুর্নামেন্টে খেলেছেন জকোভিচ। কিন্তু ষষ্ঠ ইতালিয়ান ওপেনের শিরোপাকে সঙ্গী করে প্যারিসে খেলতে আসছেন জকোভিচ। ইতালিয়ান ওপেনের ফাইনাল ম্যাচটি ছিল তার ক্যারিয়ারের হাজারতম জয়। মাত্র পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে জকোভিচ এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। একইসাথে এটি তার ৩৮তম মাস্টার্স শিরোপা। সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নাদালের তুলনায় এটি মাত্র দুটি জয় কম। ফাইনালে গ্রিক তারকা স্টিফানোস টিসিতসিপাসকে হারানোর মাধ্যমে সপ্তাহটি স্মরণীয় করে রাখার পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রস্তুতিটাও তিনি সেড়ে ফেলেছেন। ২০২১ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনলে দুই সেটে পিছিয়ে থেকে জকোভিচ এই টিসিতসিপাসকে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিলেন।
পায়ের ইনজুরিতে ভুগছেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন নাদাল। তবে নাদালের পাশাপাশি আরো একজন স্প্যানিয়ার্ড জকোভিচের জন্য সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তার কারন হয়ে উঠতে পারেন। ১৯ বছর বয়সি কার্লোস আলকারাজকে নিয়ে পুরো টেনিস বিশ্বই বেশ আশাবাদী। ২০২২ সালে চারটি শিরোপা জিতে ইতোমধ্যেই নিজেকে বিশ্ব র্যাংকিংয়ের ষষ্ঠ স্থানে উঠিয়ে এনেছেন। এই চারটি শিরোপার মধ্যে তিনটিই আবার ক্লে কোর্টের। মাদ্রিদে জিতেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় মাস্টার্স শিরোপা। এই শিরোপা জয়ের পথে তিনি নাদাল, জকোভিচ ও তৃতীয় বাছাই আলেক্সান্দার জেভরেভকে বিদায় করেছেন। গত বছর ঠিক এই সময়ে র্যাংকিংয়ের ৯৭তম স্থানে ছিলেন আলকারাজ। ২০০৫ সালে নাদাল যখন প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন আলকারাজের বয়স তখন ছিল মাত্র দুই। কিন্তু ২০২১ সালেই দারুণভাবে ছন্দে ফিরে ফ্রেঞ্চ ওপেনের তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত খেলেছিলেন।
প্যারিসে নাদালের তিনটি পরাজয়ের দুটির পেছনের জকোভিচ দায়ী। এর মধ্যে একটি ছিল এক বছর আগে সেমিফাইনালের পরাজয়। মার্চে হাড়ের পাঁজরের ইনজুরির কারণে বেশ কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন নাদাল। রোমে খেলতে নেমে পায়ের ইনজুরিতে পড়ায় শেষ ১৬ থেকেই বিদায় নিতে হয়। ৩৫ বছর বয়সি এই স্প্যানিয়ার্ড বুধবার রোলা গ্যাঁরোতে প্রথমবারের মতো অনুশীলন করেছেন। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে পঞ্চম স্থানে থাকা নাদাল বলেন, ‘ইনজুরির সাথে থাকতে থাকতে এটা এখন আমার জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো ইনজুরি থেকে কোর্টে ফেরাটা মোটেই সহজ নয়। সঠিকভাবে অনুশীলন করতেও আমার সমস্যা হচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে নাদালের কাছে পরাজিত বিশ্বের দুই নম্বর খেলোয়াড় দানিল মেদভেদেভ হার্নিয়া অস্ত্রোপচার থেকে সুস্থ হয়ে উঠে এ সপ্তাহে জেনেভা ওপেনের মাধ্যমে কোর্টে ফিরেছেন। ইউএস ওপেন বিজয়ী এই তারকার নামের পাশে রয়েছে ১৩টি শিরোপা। কিন্তু এখনো ক্লে কোর্টের শিরোপা অধরা থেকে গেছে। ২০২১ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত চারবারের মোকাবিলায় একবারও কোনো ম্যাচ জিততে পারেননি।