logo
আপডেট : ১৮ মে, ২০২২ ১৮:৪৮
ভোরের আকাশে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রিট
নার্স বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ হাইকোর্টের
জামাল উদ্দিন ও তার পরিবারের সব ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

নার্স বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ হাইকোর্টের

দেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের বদলী বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। দুদককে আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বদলি বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের হোতা জামাল উদ্দিন, তার পরিবারের সদস্য ও সংশ্লিস্ট সকলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৮ মে) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করা হয়েছে।

রুলে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করতে দুদককে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন: নার্স বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি চেয়ে রিট

নার্স বদলি বাণিজ্য নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকায় ‘তিনমাসে এত বদলি, লেনদেন কত’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে দাখিল করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ল’ এন্ড লাইভ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়।

মানবাধিকার সংগঠন ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের গত ১০ এপ্রিল এই রিট আবেদন দাখিল করেন। এ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।


রিট আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নার্স কর্মরত রয়েছেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পেশাগতভাবে বদলি চাকরির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই পেশাগত বদলি হয়ে উঠেছে নার্স পেশার একটি আতংকের নাম। প্রত্যেক নার্সকে প্রতিবার বদলির জন্য গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এই বদলি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর তিন মাসে প্রায় চার হাজার নার্সকে বদলি করা হয়েছে। সেই বদলির মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকায় ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে সব উল্লেখ আছে। ওই প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয়, বিশেষ একটি সিন্ডিকেট বাংলাদেশের নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি পেশাকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। এই নার্স বদলি বাণিজ্যের অন্যতম হোতা মোঃ জামাল উদ্দিন নামে কুষ্টিয়ার এক ব্যক্তি। যিনি উক্ত অধিদপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। অধিদপ্তরে সবকিছুই যেন জামাল উদ্দিনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে।

বদলি বাণিজ্যের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন জেলা থেকে তার এবং তার আত্মীয় স্বজনের একাউন্টে জমা করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি পাস একজন ভবঘুরে জামাল উদ্দিনের কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, রয়েছে আলিশান বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ। স্ত্রীর নামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। সব মিলিয়ে এ যেন নার্স পেশাকে ধ্বংসের এক পাঁয়তারা। চাকরি হারানোর ভয়ে নার্সরা এই সিন্ডিকেট বাণিজ্যের বিষয় কোনো ধরনের অভিযোগ তোলার সাহস পায় না। অথচ বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে নার্স পেশা পড়ছে হুমকির মুখে। হাজার হাজার নার্সের কাছ থেকে অবৈধভাবে ঘুষ বাণিজ্য করে নার্সদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নার্সদের পেশার স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। বদলির জন্য নার্সদের টাকা প্রদানে বাধ্য করা এবং তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া নার্সদের মৌলিক অধিকারের চরম লংঘন। তাই যেসব নার্স বদলির জন্য টাকা প্রদান করেছেন উক্ত টাকা ফেরত পাওয়া তাদের আইন সম্মত অধিকার।