তেল, পেঁয়াজ ও গমের পর এবার অস্থির চালের বাজার। এত বছর মিল মালিকরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও সেখানে এখন আধিপত্য বিস্তার করছে বড় বড় শিল্প গ্রুপ। প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করার উদ্দেশে মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনে মজুদ করছে তারা। এ কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বলে দাবি করছেন চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এর ফলে সব ধরনের বস্তায় ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। আর এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় ভবিষ্যতে চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী বাজারের আজিজ স্টোরের মালিক মো. আজিজ চালের বাজারের অবস্থা ভালো নয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দু’দিন আগে নতুন করে বস্তা প্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন হারে চালের দাম বেড়েছে। চালের বাজার এখন মিল মালিক ও বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। সয়াবিন তেলের মতো এখন চালও মজুদ করা হচ্ছে। এ কারণে চালের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ার শংকা দেখা দিয়েছে।’
নগরীর চাক্তাই চালপট্টির ব্যবসায়ী এম সরোয়ার আলম চৌধুরী বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। চালের দামই বা আর বাকি থাকবে কেন? বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ আছে। কিন্তু আমরা মিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সাধারণ মানুষ মোটা চাল খেয়ে বেঁচে থাকে। সেই মোটা চালের দামও বেড়েছে বস্তায় ২৫০ টাকা। চিনিগুঁড়া ও সব ধরনের আতপ চালের দামও বেড়ে গেছে।’
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে চিনিগুঁড়া চালের দাম বেড়েছে ৫০০ টাকা। অন্যান্য চালে গড়ে ৩০০ টাকা করে দাম বেড়েছে। দু’দিন আগে দুই হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হওয়া জিরাশাইল চালের ৫০ কেজির বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়, এক হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পাইজাম স্বর্ণার বস্তা এখন দুই হাজার ২৫০ টাকা, এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা চালের বস্তা এখন এক হাজার ৯৫০ টাকা, এক হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পারিজা চালের বস্তা এখন দুই হাজার ২৫০ টাকা, দুই হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া মিনিকেট সিদ্ধ চালের বস্তা এখন দুই হাজার ৩৫০ টাকা এবং বস্তায় ৫০০ টাকা বেড়ে চিনিগুঁড়া চাল এখন বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকায়। এভাবে হুট করে চালের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নগরীর পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম
নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের অবকাঠামো তো ভেঙ্গে গেছে। প্রশাসনের যে ভূমিকা থাকার কথা তা কিন্তু নেই। এসব কারণে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। আগে
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করত মিল মালিকরা। আমরা মিলারদের কাছ থেকে পাইকারিতে চাল কিনে খুচরা ও সরাসরি ভোক্তার কাছে চালের যোগান দিয়ে আসছি। এখন সেখানে বড় বড় শিল্প গ্রুপ ঢুকে গেছে। তারা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করার জন্য চাল মজুদ করে ফেলছে। ফলে মিল পর্যায়ে দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমরা বাড়তি দরে চাল কিনে তা বাড়তি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। বড় শিল্প গ্রুপের মজুদ প্রবণতা না কমাতে পারলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। বরং এখন আমরা যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে চালের দাম আরও বাড়বে।’
তেলের মতো চাল মজুদ করে বাজার পরিস্থিতি খারাপ করতে চাইলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম
বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ভোক্তার অধিকার রক্ষা করাই আমাদের কাজ। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযোগ পেলে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনছি। তেলের মতো চাল মজুদ করে বাজার
পরিস্থিতি খারাপ করতে চাইলে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে, কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ভাইস- প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাজারে কোনো পণ্যই ক্রেতার নাগালের মধ্যে নেই।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্নভাবে চাল, সয়াবিন, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য মজুদ করে বাজার দর বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কারা চালের বাজার অস্থির করে তুলছে, সমস্যাটা আসলেই কোথায়? সেটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। ‘