logo
আপডেট : ১৮ মে, ২০২২ ২১:১২
চোরাই মোবাইল কেনাবেচার কেন্দ্রস্থল মোতালেব প্লাজা
নিজস্ব প্রতিবেদক

চোরাই মোবাইল কেনাবেচার কেন্দ্রস্থল মোতালেব প্লাজা

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন

চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন কেনাবেচার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মোতালেব প্লাজা। চুরির পর মোবাইল ফোনটি কয়েকবার হাত বদল হয়ে বিক্রির জন্য স্থান পায় মোতালেব প্লাজায়।

মঙ্গলবার রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোবাইল চোর চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন-মনির হোসেন (২৮), মোতাহার হোসেন (৫৫), সুরুজ হোসেন (২২), মো. শাহজালাল (২৩), মেহেদী হাসান (২০), কুমার সানি (২৫), মো. হৃদয় (২৫) ও শামীম ওসমান (১৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ১৫৮টি চোরাই মোবাইল, একটি ল্যাপটপ ও এক লাখ আঠারো হাজার টাকা। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় ডিবি পুলিশ।

বুধবার ( ১৮ মে) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিককালে মোবাইল ফোন চুরি বা টান মেরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। পুলিশের নিকট যে ঘটনাগুলো আসে সেগুলো উদ্ধার করা হয় এবং আসামীদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর তারা জামিনে বেড়িয়ে এসে পুনরায় একই কাজে লিপ্ত হয়। কারণ চোরাই মোবাইল বিক্রি করতে পেরে তারা এ কাজে উৎসাহ পায়।

তিনি বলেন, যারা চোরাই মোবাইল বিক্রি করবে তাদেরকেও প্রচলিত আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হবে।

চোরাই মোবাইল বিক্রির প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, চুরি হওয়া মোবাইলগুলো ৩টি হাত বদল হয়। প্রথমত যে চুরি করে সে মোবাইলভেদে ৪-৮ হাজার টাকায় টেকনিশিয়ান বা কোন চোরাইফোন ক্রেতার নিকট বিক্রি করে দেয়। টেকনিশিয়ান বা চোরাই ফোন ক্রেতা ফোনের পাসওয়ার্ড বা ফাইন্ড ইউর ফোন এ অপশনটি চালু থাকলে তার ডিসপ্লে ও কেসিং উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আর এসব অপশন চালু না থাকলে আইএমইআই পরিবর্তন করে আইফোনের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ও অন্য ফোনগুলো ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।

অল্প পয়সায় দামী ফোন ক্রয়-বিক্রয়ের কথা উল্লেখ করে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, পুরাতন মোবাইল বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু ব্যবসায়ীদের নিকট চোরাই মোবাইল থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যারা বিক্রি করে তারাও অপরাধী। বিক্রেতাদের এসব কাজ থেকে সরে আসার অনুরোধ করেন তিনি।

তিনি বলেন, গত ২৯ এপ্রিল এক ব্যক্তি উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের জামে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে অজুখানা থেকে এক ব্যক্তির প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার একটি আইফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তি ১৬ মে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মুঠোফোন চুরির মামলা করেন। ডিবি উত্তরা বিভাগের উত্তরা অঞ্চলের দল ওই ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে।

একপর্যায়ে তারা চুরিতে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মুঠোফোন চুরির কথা স্বীকার করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় আরেকটি চুরির মামলা হয়েছে।

ডিবি প্রধান বলেন, রাজধানীতে মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নয়, তবে খুব দ্রুতই এসব ঘটনার মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এ কারণে অপরাধীরা দ্রুতই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। মোবাইল ফোন চুরি প্রতিরোধে জনসাধারণকে রাস্তাঘাটে চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্ক থেকে চলাচল করতে অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া রিকশা বা পাবলিক পরিবহনে চলাচলের সময় কথা বলার প্রয়োজন হলে গাড়ির ভিতরের দিকে মোবাইল রেখে কথা বলার পরামর্শ দেন ডিবির এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার অভিযান করতে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে আইফোনের প্রতি বেশি ঝোঁক তাদের। তারা চোরাই আইফোনের ইআইএমই নম্বর ফ্লাস দিয়ে পরিবর্তন করে বিক্রি করছে আবার দেশের বাইরেও পাঠাচ্ছে। আবার বিদেশি ইআইএমই নম্বর পরিবর্তন করা মোবাইল ফোনও বাংলাদেশে আসছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে মোবাইল ফোন বিক্রেতা, টেকনিশিয়ান, চোর ও ছিনতাইকারীরা রয়েছেন।