২০২১ সালের নভেম্বরে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্কুল ভবনটি। এর বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও খসে পড়ে পলেস্তারা। এরপর স্কুল ভবনটিকে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে আতঙ্কে রয়েছেন অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ গোটা এলাকাবাসী।
বলছিলাম মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ঢেউপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা। ভবনের পাশাপাশি স্কুল আঙিনা অপরিচ্ছন্ন এবং স্যাঁতসেঁতে। এমনকি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জায়গা নেই বললেই চলে।
সরেজমিন দেখা যায়, ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটির ছাদ ও ভিমের কয়েকটি স্থানে ফাটল রয়েছে। অনেক স্থানে পলেস্তারা খসে পড়াসহ স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে দেওয়ালগুলো। চারজন শিক্ষক ও ৮৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এই বিদ্যালয়ে।
শিক্ষক ও এলাকাবাসীরা জানান, ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করা হলেও নতুন ভবন নির্মাণের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেই। বাধ্য হয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কার্যক্রম।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তৎকালীন সময়ে অস্থায়ী একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এজন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। পাশাপাশি আরো সরকারি বরাদ্দের আশ্বাস দেওয়া হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো বরাদ্দের টাকা আসেনি।
বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে ও তাদের নিজস্ব অর্থায়নে একটি নতুন টিনশেডের তিন রুম বিশিষ্ট অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে অর্থ সঙ্কটে তা পুরোপুরি শেষ করতে পারছেন তারা। ফলে অস্থায়ী টিনশেডের ঘরেও পাঠদান শুরু করা যায়নি।
স্কুলটির শিক্ষক আশীষ কুমার দাশ বলেন, ‘ভূমিকম্পের ফলে স্কুলটির ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়। এমতাবস্থায় আমাদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন। তারা পরিদর্শনও করে গেছেন।’
শিক্ষক মো. রেনু মিয়া বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এখনো পাঠদান চলছে। আমরা সবসময় একটা আতঙ্কে থাকি।’
স্থানীয় বাসিন্দা মহসিন পারভেজ বলেন, ‘এ অবস্থায় পাঠদান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্কুলে সন্তানদের পাঠিয়ে অভিভাবকদের এক অজানা আতঙ্কে থাকতে হয়।’
অভিভাবক নুরু রহমান বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী টিনশেডের ঘর নির্মাণ করেছিলেন, তা এখনো শেষ করতে পারেননি। পুরোনো ভবনে এখনো চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।’
শিক্ষক সুমা রানী দেব বলেন, ‘শিক্ষার্থীসহ আমাদের মধ্যে তো ভয় কাজ করে। স্কুল যেহেতু খোলা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ক্লাস নিতে হবে। পাশের টিনশেড ঘর তৈরি হলে সেখানে যাব।’
প্রধান শিক্ষক সজল মোহন দেব বলেন, ‘স্কুলটির অবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা এখানে এসে পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ বলেছেন। তাদের কাছে নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।’
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোতাহার বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে দেখেছি। এর প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক তিনরুমের একটা টিনশেড ঘর তৈরি করা হচ্ছে। স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।’