শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ছিল দ্রুত ৮ উইকেট তুলে নেওয়া। কিন্তু সেই কাজটি করতে পারেনি বোলাররা। বলতে গেলে একাই ঘূর্ণি বলে ছোবল মারা শুরু করেন তাইজুল ইসলাম। তাতে জাগে আশা। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। সপ্তম উইকেটে ডিকভেলা ও চান্দিমালের ধৈর্যশীল ব্যাটিং সবকিছু শেষ করে দেয়। জয়ের আশায় থাকা বাংলাদেশ শিবিরে পোড়ে হতশায়। ম্যাচ হয় ড্র। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা করেছিল ৩৯৭ রান। জবাবে ৪৬৫ রান করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে করে ৬ উইকেটে ২৬০ রান। দিনের খেলা বাকি ছিল ১৫ ওভারের মতো। ম্যাচের রেজাল্ট তাতে বের করা মুশকিল। ড্র মেনে নেয় দুই দল।
আগের দিনের ২ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে বৃহস্পতিবার ম্যাচের পঞ্চম দিনে খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন করুণারত্নে। তার সঙ্গী হন কুশল মেন্ডিস। এ জুটি দলকে টেনে নিয়ে যান ১০৬ রান পর্যন্ত। এ জুটি বিচ্ছিন্ন করেন বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম। পানি-পানের বিরতির পর দ্বিতীয় বলেই আগ্রাসী কুসল মেন্ডিসকে বোল্ড করে দেন তাইজুল ইসলাম। ৪৩ বলে ৪৮ রান করে ফেরেন মেন্ডিস। তার ইনিংসটি গড়া ৮টি চার ও এক ছক্কায়। এরপর মাঠে নামেন প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। এবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। তাকে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরত পাঠান তাইজুল ইসলাম। ১৩ বল খেলে ফেললেও রান করতে পারছিলেন না ম্যাথুস। সেই বৃত্ত ভাঙতেই হয়তো আগ্রাসী শট খেলতে গেলেন অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান। তাতে বিদায় নিতে হলো তাকে হতাশা নিয়েই। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন তাইজুল। উইকেটে ৪১ রান করা দিমুথ করুণারত্নের সঙ্গী তখন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
সতীর্থের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করেন অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। ১৩২ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। টেস্ট ক্যারিয়ারে বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যানের এটি ২৮তম পঞ্চাশ। বাংলাদেশের বিপক্ষে করলেন তৃতীয়বার। ফিফটির পরই ফেরেন করুণারত্নে। তাইজুলের করা ৪৮তম ওভারের প্রথম বলটি উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি ঠিকমতো। বল উড়ে যায় মিড-উইকেটে। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ মুঠোয় জমান বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। শেষ হয় ২ চারে ১৩৮ বল স্থায়ী করুণারত্নের ৫২ রানের ইনিংস। ক্রিজে জমে যাওয়া ধনাঞ্জয়াকে এরপর ফেরান সাকিব। একবার বেঁচে যান একটুর জন্য ক্যাচ ফিল্ডারের কাছে না যাওয়ায়। এবার আর টিকলেন না, সাকিব আল হাসানকে পুল করার চেষ্টায় মিড-উইকেটে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিমের হাতে। ভাঙে ৫৫ বল স্থায়ী ১৮ রানের জুটি। তিন চার ও এক ছক্কায় ৬০ বলে ৩৩ রান করেন ধনাঞ্জয়া।
এরপর থেকেই ডিকভেলা ও চান্দিমালের প্রতিরোধের শুরু। এরই মাঝে সুইপ করে ক্যাচের মতো দেন নতুন ব্যাটসম্যান নিরোশার ডিকভেলা। তবে স্কয়ার লেগে লাফিয়ে তাইজুল ইসলাম কেবল আঙুল ছোঁয়াতে পারেন। এরপর সাকিবের বলে আরেকবার জীবন পান ডিকভেলা। লেগ সাইডে খেলেন ডিকভেলা। তার ব্যাট থেকে বল যায় লেগ গালিতে। কিন্তু একটুর জন্য হয়নি ক্যাচ। পরে তাইজুলকেও হতাশ করেন ডিকভেলা। ৬৪তম ওভারের চতুর্থ বলটি অফ-স্টাম্পের অনেক বাইরে পড়ে টার্ন করে ভেতরে ঢোকে বেশ খানিকটা। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেন নিরোশান ডিকভেলা। কিন্তু ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল প্যাডে লেগে বাঁহাতি ডিকভেলার লেগ-স্টাম্পের পাশ দিয়ে যায়। ১১৭ বলে ফিফটির জুটি গড়েন দুজন। তাদের জুটি এখন ৫১ রানের। ৮২তম ওভার শেষে মাঠ ছেড়ে উঠে যান কিপার লিটন কুমার দাস। তার জায়গায় গ্লাভস হাতে নামলেন নুরুল হাসান সোহান।
উইকেট মিলছে না, তেমন কোনো সুযোগও তৈরি হচ্ছে না। যেন ইস্পাতকঠিন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিরোশান ডিকভেলা ও দিনেশ চান্দিমাল। তাদের প্রতিরোধ ভাঙতেই হয়তো অনেকটা নিশ্চিত নট আউট জেনেও রিভিউ নেন মুমিনুল হক। তাতে নিজেদের প্রথম রিভিউ হারায় বাংলাদেশ। নাঈম হাসানের বলে চান্দিমালের কট বিহাইন্ডের আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট স্পর্শ করেনি। তখন ২৮ রানে খেলছিলেন চান্দিমাল। এরপর দুজন খেলেছেন আরো কিছুক্ষণ। তারপরই আসে ড্রয়ের ঘোষণা। চান্দিমাল ১৩৫ বলে ৩৯ রানে ও নিরোশান ডিকভেলা ৯৬ বলে ৬১ রানে থাকেন অপরাজিত। বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে চারটি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। বাকি এক উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করার সুবাদে ড্র হওয়া ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন শ্রীলঙ্কার তারকা অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস।