গ্রীষ্মের খরতাপের রেশ কাটিয়ে আসছে বর্ষা। তবে দাবদাহের কমতি নেই। এই উত্তাপের মাঝেও চারদিকে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে মায়াবী কোকিলের ডাক। মায়াবী এই ডাক আসছে রাস্তার দুপাড়ের বৃক্ষরাজি থেকে।
রোদ্দুরে পুষ্পভারে আচ্ছাদিত এসব বৃক্ষ। হাল্কা বাতাসে সবুজ পাতার ফাঁকে মাথা তুলেছে বেগুনি পাপড়ি। পিচ ঢালা রাস্তার পাশের এমন মায়াবী দৃশ্যে চোখ ভরে উঠবে যে কারোরই।
সৃষ্টিকর্তার এমন এক সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায়। আর এমন বেগুনি পাপড়ির গাছগুলো জারুল ফুলের।
জারুলকে বলা হয় বাংলার চেরি। গ্রীষ্মে অপূর্ব হয়ে ফোটে এই ফুল। চোখ ভরে যায় তার রূপে। জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া অঞ্চলে জারুল গাছের দেখা মেলে।
পানিপছন্দ প্রজাতি জারুল। গাছ প্রায় ১০-২৫ মিটার হয়। পত্রমোচি গাছ। পাতা আয়তাকার। গ্রীষ্মে কচি পাতায় ভরা গাছের ডালের আগায় বেগুনি রঙের ফুলের বড় বড় থোকা বেশ নজর কাড়ে। ফুল ৫-৭ সেন্টিমিটার চওড়া, অনেকগুলোয় সোনালি পুংকেশর থাকে। ফল ডিম্বাকার, শক্ত, বিদারি। বীজ ১ সেন্টিমিটার চওড়া, পাতলা, বাদামি। বীজে চাষ।
জারুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে কবি আহসান হাবিব তার স্বদেশ কবিতায় লিখেছেন, ‘মনের মধ্যে যখন খুশি এই ছবিটি আঁকি, একপাশে তার জারুল গাছে দুটি হলুদ পাখি।’
প্রয়াত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর তার গানে বলেছেন, ‘ওগো বিদেশিনী, তোমার চেরি ফুল দাও, আমার শিউলি নাও, এসো দুজনে প্রেমে হই ঋণী।’ সেই গান শুনে হয়তো কোনো এক কাল্পনিক বিদেশিনীকে শিউলি ফুল দেওয়ার জন্য কত খুঁজেছে, কিন্তু পায়নি। যেমনটি পায়নি চেরি ফুলের দেখাও।’
ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর, ধলাপাড়া, দেওপাড়া, গারোবাজার, সাগরদীঘি ও জোড়দীঘি এলাকায় ঘুরে দেখা মিলে এমন জারুলের অপরূপ দৃশ্যের। সবুজ প্রকৃতির মাঝে রোদে ঝলমল করছে একেকটি জারুল গাছ। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের চমৎকার ফুল। বেগুনি রঙের আভা পথিকের চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা।
দেওপাড়ার মলাজানী বাজারের পূর্বপাশে রাস্তার ধারে সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত বেগুনি জারুল ফুটিয়ে তুলেছে রহস্যময় প্রকৃতি। রঙ আর রূপের বাহার ছড়ানো অপরূপ বর্ণিল সাজের এই ফুল সাজিয়েছে সৌন্দর্যের ডালি।
জোড়দীঘি কলেজের পেছনে ও সাগরদীঘি ফরেস্ট অফিসের রাস্তার পাশে সুভাষিত হচ্ছে জারুলের ঝুমকো। ফুলে ফুলে সৃষ্টি করেছে অপরূপ নান্দনিকতার। যোগ করেছে নতুন সৌন্দর্যের মাত্রা।
বাংলাদেশে সাধারণত নীলাভ ও গোলাপি এই দুই রঙের জারুল ফুল দেখা যায়। এ গাছের বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছাড়া জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতার চিকিৎসায়ও জারুল যথার্থ উপকারী।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আলীম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে সব ঋতুতেই কোনো না কোনো ফুল ফোটে। এসব ফুলের রঙ, গন্ধ আলাদা। তবে গ্রীষ্মের ফুলের মধ্যে জারুল অন্যতম। এর নজরকাড়া বেগুনি রঙ সবাইকে বিমোহিত করে।’