logo
আপডেট : ২০ মে, ২০২২ ১৩:০৪
পাথরে ভর করে টিকে আছে নাকুগাঁও স্থলবন্দর
আসার কথা ১৯টি, আসে একটি
শাকিল মুরাদ, শেরপুর


পাথরে ভর করে টিকে আছে নাকুগাঁও স্থলবন্দর

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে ১৯টি পণ্য আমদানির কথা থাকলেও বর্তমানে শুধু একটি পণ্য পাথর আনা হচ্ছে। আর মাঝে মধ্যে আমদানি হচ্ছে কয়লা। এতে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে স্থলবন্দরটির কার্যক্রম। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। অথচ সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে নাকুগাঁও স্থলবন্দরে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সহজে ও লাভজনক পণ্যের অনুমতি না থাকায় তারা আমদানি করতে পারছেন না। পণ্যগুলো আমদানি করা গেলে দেশের রাজস্ব আয় বাড়বে। তারা অনুমতি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বারবার আবেদন করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

তারা বলছেন, বন্দরটির ওপারেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সেখান থেকে শুঁটকি মাছ, খৈল, সুপারি ও পশুখাদ্য আমদানি করা সহজ এবং লাভজনক হবে।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শেরপুর-২ (নালিতাবাড়ী-নকলা) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর চেষ্টায় ১৯৯৭ সাল থেকে নাকুগাঁও শুল্ক বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বন্দর দিয়ে কয়লা ও পাথর ছাড়া সব পণ্য আমদানি বন্ধ করা হয়। ২০০৯ সালে ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরটি পরিদর্শন করে এটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা দেন।

২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সাবেক নৌ-পরিবহণমন্ত্রী নাকুগাঁও এলাকায় পূর্ণাঙ্গ বন্দরের অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এর অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নাকুগাঁও থেকে নকলা উপজেলা পর্যন্ত সাড়ে ২৯ কিলোমিটারের সড়কের কাজ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ জুন নাকুগাঁও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পরিচালনায় অপারেশন শুরু করে। কার্যক্রম শুরুর দিকে কয়লা আমদানি করা হলেও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে শুধুই পাথর আমদানি করা হচ্ছে।

সীমান্তে আসা পাথর ভাঙার কাজ করছেন শ্রমিকরা

নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিযোগ্য পণ্যগুলো হলো, গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছরা, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে ও কোয়ার্টজ। এত কিছু পণ্যের আমদানির কথা থাকলেও ভারত ও ভুটান থেকে শুধু পাথরেই সীমাবদ্ধ এ বন্দর।

এ বন্দরে ‘শ্রমিক ইউনিয়ন শাখার’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন প্রায় ৮০০ শ্রমিক। এ ছাড়া দিন হিসেবে কাজ করেন আরো প্রায় এক হাজার শ্রমিক। আমদানি কম হওয়ায় বেকার হয়ে পড়ছেন তারা।

বন্দরে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, এখন শুধু বন্দর দিয়ে পাথর আসছে, আগে কয়লা আসত। যদি কয়লাসহ অন্যান্য মালামাল আনা হতো এই বন্দর দিয়ে তাহলে শ্রমিকদের অনেক ভালো হতো।

শ্রমিক হাসমত আলী বলেন, ‘আগে তাও কয়লা আই তো, এখন আর আসে না। কয়লা আইলে আমাগোর ইনকাম ভালো হয়। কিন্তু আসে না, শুধু পাথর আসে। যদি কয়লাসহ অন্যান্য জিনিস আনা হয় তাহলে আমাগোর ইনকাম বেশি হবো। পাশাপাশি মেলা মানুষ কাজের সুযোগ পাবে।’

শ্রমিক লাল মিয়া বলেন, ‘ভাই আপনারা কয়লাসহ আরো কয়েকটা আইটেম নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দেন। তাহলে আমরা খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারব। না হয় বেশিরভাগ সময় আমাদের বসেই থাকতে হয়।’

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘বর্তমানে ভারত থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণে কয়লা আসে। যেসব পণ্য আমদানি করা সহজ হবে, সেসব পণ্য আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এ বন্দরের ওপারেই মেঘালয় রাজ্য থাকায় সেখান থেকে শুঁটকি মাছ, খৈল, সুপারি ও পশুখাদ্য আমদানি করা সহজ এবং লাভজনক হবে। এ বিষয়ে এনবিআরের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।’

বন্দরটির সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাজেশ চাকমা বলেন, ‘বন্দর দিয়ে অনুমোদিত ১৯টি পণ্য আমদানি ও নিষিদ্ধ ব্যতীত সব পণ্য রপ্তানি করা যাবে। তবে যেসব পণ্য আমদানি করে রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন সে জন্য নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে।’