ড্রয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার চট্টগ্রাম টেস্ট। পুরো পাঁচ দিনই খেলা হয়েছে। তবে কোনো দলই পুরোপুরি দুই ইনিংস খেলার সুযোগ পায়নি। বাংলাদেশকে তো এক ইনিংস খেলে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। আর শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে নামলেও তা পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। ফল ম্যাচ ড্র। প্রথম দিন শেষেই ম্যাচের ফল যে এমন হতে যাচ্ছে, তা নাকি বুঝতে পেরেছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ম্যাচ ড্র হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘পিচে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। তবে ম্যাচ ড্র হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।’
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ঢাকায় হবে। দুই দলই এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। আগামী ২৭ মে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ায় ঢাকা টেস্ট সিরিজ নির্ধারক ম্যাচে রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রামের পিচ ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হওয়ায় উভয় দলের ব্যাটাররা ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। এ সুযোগ তাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসারও সুযোগ দিয়েছে। গত মার্চ মাসে ভারত সফরে শ্রীলঙ্কা খুবই বাজে সময় পার করেছে। সফরে তারা চার ইনিংসে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। ২০৮ রানের বেশি করতে পারেনি। প্রায় একই অবস্থা বাংলাদেশের ব্যাটারদের। বরং বাংলাদেশের ব্যাটারদের অবস্থা একটু বেশিই নাজুক। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করেছে ব্যাটাররা।
গত ছয় মাসে বাংলাদেশ চার ইনিংসে ১৫০ রান পার হতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় গত মাসে ৫৩ ও ৮০ রানেরও ইনিংস রয়েছে। অথচ চট্টগ্রামে ব্যাটারদের গড় রান ছিল ৪৪.৮৮। তিনটি সেঞ্চুরি দেখেছে দর্শকরা। আর হাফসেঞ্চুরি ছয়টি। উভয় দলেরই ব্যাটাররা বড় জুটিও গড়েছে। গত বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার ধনঞ্জয়া সিলভা বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছিলাম ম্যাচ ড্র হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সামনে অবশ্য জয়ের সামান্য একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। যাই হোক, ম্যাচ ড্র হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।’
এদিকে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেন, দ্বিতীয় টেস্ট ঢাকায় হবে। সেখানে ব্যাটারদের মানসিকভাবে মানিয়ে নিতে হবে। ঢাকার পিচ অনেকটা স্পোর্টিং হবে। ভিন্ন পরিবেশ এবং ভিন্ন পিচে খেলার জন্য মানসিকভাবে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে। আমরা সারা বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামে খেলে থাকি। সুতরাং দুই ভেন্যু বিষয়ে আমরা অনেক পরিচিত। দুই ভেন্যুও পেস ও স্পিনের চরিত্র আমরা জানি। চট্টগ্রামে স্পিন বল একটু ধীরগতিতে আসে। ঢাকার পিচে একই গতির বল ভেতরের দিকে আসুক বা বাইরের দিকে চলে যাক, তা তুলনামূলকভাবে দ্রুতগতিতে ঘটে থাকে। আমরা একটা অনুশীলনে ঠিক করতে পারি। সুতরাং এটা মানসিকতার বিষয়।’
ঢাকার পিচ ব্যাটারদের পরীক্ষা নেবে। তবে মমিনুল তার সতীর্থদের ঢাকায় ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী। তার বিশ^াস ব্যাটাররা চট্টগ্রামের মতো ঢাকায়ও ভালো করতে পারবে। ব্যাটারদের নিয়ে মমিনুল আশাবাদী হলেও বোলারদের নিয়ে কিছুটা হতাশ। বিশেষ করে পেস বোলারদের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ অধিনায়ক সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।’ মুমিনুল বলেন, ‘প্রত্যেকে রান পেয়েছে। বোলাররা উইকেটও নিয়েছে। আমরা একটা দল হিসেবে খেলেছি। আমি সবসময় বলে এসেছি, আমরা তখনই ভালো করি যখন দল হিসেবে আমরা ভালো খেলি। দল হিসেবে ভালো খেললে আমরা ভালো ফল পাই। পেসাররা প্রথম ইনিংসে ভালো বল করেছে। উইকেট নেওয়া কঠিন সত্ত্বেও স্পিনাররা ভালো করেছে। সাকিব ভাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি ভালো করেছেন।’
এদিকে শ্রীলঙ্কার পেসাররা ভালো করায় দল আশাবাদী। বিশ্ব ফার্নান্ডো ইনজুরি আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রামে তারা বাংলাদেশের ব্যাটারদের চাপে রেখেছিল। ঢাকা টেস্ট সম্পর্কে ধনঞ্জয়া বলেন, ‘ঢাকায় আমরা নিশ্চিতভাবে তিনজন পেসার ব্যবহার করবো। সঙ্গে থাকবে একজন স্পিনার। আশা করছি, উইকেট স্পিনারদের জন্য সহায়ক হবে। যদি আমরা প্রথমে ব্যাট করি, তাহলে ৩০০ রান করার চেষ্টা করব। তারপর বাংলাদেশকে ১৫০ রানের মধ্যে অলআউট করার চেষ্টা করব। এটা করতে পারলে আমাদের জয়ের একটা সুযোগ থাকবে।’ তবে ঢাকা টেস্টের পিচ কেমন হবে সে ব্যাপারে এখনো জানা যায়নি। কিউরেটর গামিনি সিলভা কেমন পিচ তৈরি করবেন, সে চিন্তায় এখন সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।