logo
আপডেট : ২০ মে, ২০২২ ১৮:৪৩
সোমবার বিশেষ বিমানে আসছে গাফফার চৌধুরীর মরদেহ
দাফন বনানীতে
নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার বিশেষ বিমানে আসছে  গাফফার চৌধুরীর মরদেহ

আবদুল গাফফার চৌধুরী (ফাইল ফটো)।

আগামী সোমবার যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষ বিমানে দেশে আসছে সদ্য প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক, গীতিকার, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ।

এরপর বনানী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

মৃত্যুর আগে তিনি তার কাছের মানুষজন এবং সন্তানদের কাছে এমনটাই বলে গেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে চেতনার বাতিঘরখ্যাত গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের বিশিষ্টজনরা নিজেদের অভিব্যক্তি তুলে ধরছেন। কেউ কেউ তাকে নিয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসে ভালোলাগা ও অভিজ্ঞতার কথাও লিখছেন।

বনানী কবর স্থানে তার স্ত্রীর কবরের পাশে তিনি নিজেই কবরের জায়গাও নির্ধারণ করে গেছেন। গাফফার চৌধুরীর লাশ এখনো যুক্তরাজ্যের বার্নেট হাসপাতালে আছে। তার ছেলেমেয়েরা সেখানে আছেন। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুনা তাসনিম হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

ঢাকায় দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, শুক্রবার ব্রিকলেন মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আলতাব আলী পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন মরদেহ নেওয়া হয়। এরপর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বাংলাদেশে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে বিমান বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। তার মৃত্যুতে দেশীয় শোবিজ অঙ্গনেও শোকে ছায়া নেমে এসেছে। শোবিজের অনেকেই এ গুণীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন দেশের নন্দিত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও। কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে বর্তমানে ফ্রান্সে রয়েছেন এ নির্মাতা। সেখান থেকেই নিজের ফেসবুক পাতায় আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি শোক জানান এ তিনি।

ফারুকী লেখেন, ‘ গাফফার ভাইয়ের অনেক মত বা কথার সাথে আমার দ্বিমত ছিল, অনেক কথার সাথে একমত ছিল। আমার কাজ খুঁজে বের করে দেখে আমাকে ফোন দিয়ে উনি উৎসাহ দিতেন। আমার কাজ সরকারি সেন্সর কলে আটকা পড়লে তিনি এর প্রতিবাদ করতেন। তিশার অভিনয়ের দারুণ ভক্ত ছিলেন উনি।’ তিনি আরো লেখেন, ‘ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যতটুকু বুঝেছি, সিনেমার ব্যাপারে উনার আগ্রহ ছিল প্রবল এবং উনার সিনেমা-রুচি উনার সময়ের তুলনায় অগ্রসর।’

আবদুল গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে পুরোনো স্মৃতিও তুলে ধরেন তিনি, উনাকে আমি অনেকবার একটা কথা বলেছি, “গাফফার ভাই, আপনি যদি আর কিছু নাও লিখতেন, কেবল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র জন্যই আপনার স্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে পাকা থাকত। আপনাকে ভালোবাসুক-মন্দবাসুক, প্রতি বছর একবার করে বাংলাভাষী মানুষেরা প্রাণ খুলে গাইবে আপনার লেখা গান। কোনো এক একলা ছাদের নিচে বসে লিখা আপনার শব্দগুলা ডানা মেলবে ওদের কণ্ঠের আবেগে। ভাবা যায় কী এক বিস্ময়কর ঘটনা এই গান? বিদায় আবদুল গাফফার চৌধুরী!”

তার মৃত্যুতে অনেকের মতো শোকাচ্ছন্ন হয়ে আছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। কেননা পরীর দুঃসময়ে সুদূর যুক্তরাজ্য থেকেই পাশে ছিলেন কিংবদন্তি এ লেখক। নিয়মিত সাহস জুগিয়েছেন নায়িকাকে। গত বছর মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পরীমনি। সেসময় তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। গণমাধ্যমে পরীকে নিয়ে কলাম লিখেছিলেন। এমনকি পরীমনিকে নিয়ে তিনি রচনা করেছিলেন একটি বিশেষ কবিতাও। সেই কবিতা শেয়ার দিয়েই আবদুল গাফফার চৌধুরীকে স্মরণ করলেন পরীমনি। ফেসবুকে এ নায়িকা লিখেছেন, ‘আমি পেয়েছিলাম ঐ দুর্লভরে। মিলিবে কী আর...!’

এদিকে পরীমনির ঘনিষ্ঠজন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী এক স্ট্যাটাসে আবদুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে বেশকিছু তথ্য জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘অনেকক্ষণ ভাবছিলাম খবর শোনার পর থেকে। অনেক কিছু চোখে ভেসে উঠছিল বারবার। আপনার চেহারা, কানে বাজছিল আপনার স্নেহমাখা কথা, আপনার লেখা আমাকে অজস্র টেক্সট। আগস্টের ৫, ২০২১ সাল থেকেই আপনি আমাকে খুঁজেছেন। অজস্রবার। বুঝেছিলাম পরীমনির জন্য। কিন্তু এটাও সত্যি আমার খারাপ সময়ে এমন কোনোদিন নেই আপনি আমাকে ফোন করে খবর নেন নাই। টানা ৪ মাস আপনি প্রায় প্রতিদিন খোঁজ নিয়েছেন আমার হোয়াটসঅ্যাপে।’

চয়নিকা আরো লিখেছেন, ‘আপনি আমাদের সাহস দিতেন সবসময়। সত্যি কান্না পাচ্ছে। কথা ছিল, আপনি আসবেন, দেখা হবে। অসুস্থতার ভেতরেও কল করেছিলেন আপনি। আহা!’ গত বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কিছুদিন ধরে গাফফার চৌধুরী হাসপাতালে ছিলেন। কিংবদন্তি এ মানুষটির মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সব অঙ্গনেই নেমে আসে শোকের ছায়া। শোকের পাতায় রূপ নেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক। আজীবন অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার অন্যতম এ সৈনিকের স্মৃতিচারণা করে স্ট্যাটাস দেন। তুলে ধরেন কৃত্তিমান এ মানুষের নানা অবদানের কথা।

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম। হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মোসাম্মৎ জহুরা খাতুনের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে গাফফার চৌধুরী ছিলেন তৃতীয়। উলানিয়া জুনিয়র মাদরাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়ে হাইস্কুলে ভর্তি হন গাফফার চৌধুরী। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজ থেকে পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি পান।

বাবার মৃত্যুর পর ১৯৪৬ সালে গ্রাম ছেড়ে বরিশাল শহরে চলে এসেছিলেন গাফফার চৌধুরীরা। তখন থেকেই লেখালেখির শুরু। স্কুলে পড়ার সময় কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে তার প্রথম গল্প ছাপা হয় সওগাত পত্রিকায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি কলকাতায় চলে যান সপরিবারে।