বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল। বাড়ছে প্রধান প্রধান নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, এবার সারা দেশে আগাম বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। দেশে প্রধান নদ-নদীসহ অধিকাংশ নদীর পানির বাড়ছে। ফলে মে মাসের শেষে অথবা জুনের প্রথম সপ্তাহে দেশের উত্তরাঞ্চলও বন্যার হতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা মধ্যাঞ্চল হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর সমতলে পানি বাড়ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। সমতলে পর্যবেক্ষণ করা ১০৯টি স্টেশনের মধ্যে ৭৮টি স্টেশনের পানি বাড়ছে। আগামী কয়েকদিনে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিতে পারে।
ইতোমধ্যে পদ্মা নদীর পানি বাড়ার কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর ফেরিঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে এ ঘাট দিয়ে বন্ধ রয়েছে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার। পাউবো জানায়, পদ্মা নদীর পানি সমতলে বাড়ছে ২৪ ঘণ্টায় ৮০ সেন্টিমিটার। আগামী তিন দিন পর্যন্ত বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তারা আরো জানায়, গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র যমুনার পানিও সমতলে বাড়ছে। অপরদিকে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীর পানি একই সঙ্গে বাড়ছে। তবে উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা দুধকুমার নদীর পানি না বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে। যে কোনো সময় উত্তরাঞ্চলের এসব নদী পানি বাড়তে পারে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা এবং হবিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি আজ শনিবারের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এই সময়ে সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অসি জানিয়েছে দেশের উজানের আসাম মেঘালয়, ত্রিপুরা ও হিমালয়ের পাদদেশ এলাকায় কিছুদিন ধরেই ভয়াবহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী কয়েদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নেমে এলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। আবার উত্তর পূর্বাঞ্চলের বন্যা আরো বিস্তৃত হয়ে পড়তে পারে। ফলে বানভাসী মানুষের দুর্দশা আরো বেড়ে যাবে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী দুটির পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে ১৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উজানের ঢল, টানা বৃষ্টিতে বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে ঘর, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু। বাড়ছে বন্যার পানি, সেইসঙ্গে বাড়ছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় এলাকাবাসীরা দুর্বিষহ দিন পার করছেন।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভাটির দেশ হওয়ার কারণে প্রতি বছর উজান থেকে নেমে আসার পানি ৯০ ভাগই এই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অতি বৃষ্টিপাতের কারণে অতিরিক্ত পানি নদী বহন করতে পারে না। ফলে তীর উপছে জনপদ প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দেয়। পাউবো জানিয়েছে, সাধারণত মধ্য জুলাইয়ে দেশে স্বাভাবিক বন্যা দেয়। কিন্তু এবার উজানের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সব নদীর পানি বাড়ছে। ফলে জুনের প্রথম সপ্তাহের দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রধান তিন নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীর পানি একসঙ্গে বাড়লে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে এখন পর্যন্ত সব নদীর পানি বাড়লেও বন্যা কতটা ভয়াবহ রূপ নেবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তারা জানান, জুলাইয়ে সাধারণ উত্তরের প্রধান নদী যমুনার পানি বেড়ে যাওয়া উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এই পানি যখন নেমে যায় তখন দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে।
তারা জানান, আগস্টে পদ্মা নদীর পানি আরো এক দফায় বেড়ে যাওয়া আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এই তিন নদীর পানি যখন একসঙ্গে বেড়ে যায় তখন দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ানক আবার ধারণ করে। যার প্রধান উদাহরণ হলো ১৯৮৮ সালে বন্যা। এরপর ১৯৯৮ সালের আগস্টে একই কারণে সারাদেশ বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ে। এরপর এখন পর্যন্ত এত বড় বন্যা দেশে আর দেখা যায়নি। তবে সারা দেশের সব নদীর পানি বাড়লেও বড় বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই এই মুহূর্তে।