logo
আপডেট : ২১ মে, ২০২২ ১১:৪১
অলির এলডিপিতে নতুন ভাঙন, বিএনপির ভূমিকায় নানা প্রশ্ন
* তারা দুই অংশই সরকারের বিরুদ্ধে, তাই ডাকলে যাই : গয়েশ্বর
এম সাইফুল ইসলাম

অলির এলডিপিতে নতুন ভাঙন, বিএনপির ভূমিকায় নানা প্রশ্ন

ফাইল ফটো

কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির নতুন ভাঙনে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অলি আহমেদকে ছেড়ে দলটির নেতাকর্মীদের অপর অংশে যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের উপস্থিতিই মূলত প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। বিএনপির ওই নেতা এলডিপির অপর অংশের কারান্তরীণ সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদের মুক্তি দাবির কর্মসূচিতেও অতিথি ছিলেন। তাই বিষয়টি নিয়ে বিএনপি কৌশলী আচরণ করছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ওই নেতা বলছেন, এলডিপির দুই পক্ষই সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছে। তাই উভয়ের কর্মসূচিতে যান তিনি। আর এলডিপির একাংশ বলছে, অলি আহমেদের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করছেন। আর অপর অংশ কোনো কথা বলতে চায়নি।

জানা গেছে, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ‘বীর বিক্রম’ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে এলডিপির (একাংশ) সভাপতি। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে দল গঠনের পর তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে এসে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত অলি আহমেদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বের পর দলীয় হাইকমাণ্ডের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর অলি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে এলডিপি গঠন করেন।

২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হয় এলডিপি। ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বাধীন এই দলটি গত ২০১৯ সালের ২৬ জুন একবার ভাঙনের মুখে পড়েছিল। ওইসময় এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন অনেকেই দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই। একই বছরের ১৮ নভেম্বর দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল করিম আব্বাসী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে নতুন এলডিপি গঠিত। দলটির দুটি অংশই ২০ দলীয় জোটে আছে।

১২ মে ফের অনেকটাই ভাঙনের মুখে পড়ে অলি আহমেদের এলডিপি। ওইদিন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব,কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং অঙ্গ সংগঠনসহ সব মিলিয়ে দুই শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন। তারা অলি আহমেদের বিরুদ্ধে একক আগ্রাসী মনোভাব ও ধোঁয়াশা নেতৃত্বের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন।

তবে হঠাৎ করে অলির দলে ফের ভাঙন নিয়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। পদত্যাগের পরদিন ১৩ মে অলি আহমেদকে ছেড়ে আসা এলডিপির নেতাকর্মীরা আব্বাসী-সেলিম নেতৃত্বাধীন অংশে যোগদান করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে এলডিপির এই অংশের একটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা যোগদান করেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

এরপর থেকে নতুন আলোচনা শুরু হয়। কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তোলে এলডিপির অলির আহমেদের অংশের নেতাদের। নতুন ভাঙনের নেপথ্যে বের করার চেষ্টা করতে থাকেন তারা। যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের উপস্থিতিকে বেশ সন্দেহের চোখে দেখেন অলির আস্থাভাজনরা। বিভিন্ন সময়ে অলি আহমেদের বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডে বেশ অসন্তোষ ছিলেন বিএনপি নেতারা। সবশেষ ২০১৯ সালের ২৭ জুন ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ গঠনের পর তার ওপর নাখোশ ছিলেন বিএনপি নেতারা। নতুন করে দল ভাঙার নেপথ্যে বিএনপি নেতাদের অসন্তোষ কোনো ব্যাপার কিনা সে আলোচনাও আছে রাজনৈতিক মহলে।

এলডিপির অলির অংশের নেতাদের নানা ভাবনার মধ্যে ১৮ মে বুধবার তাদের সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অর্থাৎ এলডিপির দুই অংশের কর্মসূচিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যোগ দিয়েছেন। দলটির দুই অংশের মধ্যেই ভারসাম্য রক্ষা বা কৌশলী আচরণ করছে বিএনপি। তাছাড়া বিএনপির এই আচরণের মাধ্যমে অলি আহমেদের প্রতি বিশেষ কোনো বার্তা আছে কিনা সেটি নিয়েও আলোচনা আছে রাজনীতি মাঠে।

তবে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় এলডিপির একাংশের সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেন সেলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে কেউ অলি আহমেদকে ছেড়ে আসেননি। অলির আহমেদের একগুঁয়েমির প্রতি সবাই বিরক্ত। প্রচণ্ড অহংকারী তিনি। তাই সবাই তাকে ছেড়ে আমাদের অংশে যোগ দিয়েছেন। এলডিপির প্রতি বিএনপির ভূমিকা প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, বর্তমানে অলির সঙ্গে যারা আছেন তাদের বেশির ভাগই বিএনপির একজন ওয়ার্ডের নেতা হওয়ারও যোগ্যতা নেই। তাই অলির দলে কে থাকল আর কে চলে গেল তা দেখার সময় বিএনপির নেই বলে মনে করেন তিনি।

তবে এলডিপির (অলি-রেদোয়ান) অংশের কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি।

কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কোনো ভূমিকা বুঝি না। দুই অংশই সরকারবিরোধী আন্দোলন আছে। তাই যে ডাকে তাতে আমি সাড়া দিয়ে অংশ নিই। আর নেতাকর্মীদের পদত্যাগ বা যোগদান তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।