logo
আপডেট : ২২ মে, ২০২২ ০৯:১৯
এবারও কি ‘জলে ভাসা’
এ দিকটাতে দৃষ্টিপাত জরুরি
নিজস্ব প্রতিবেদক

এবারও কি ‘জলে ভাসা’

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘বন্যা’; এই ব-দ্বীপের সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ভোগের নাম। প্রতিবছরই বানের জল সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলে মানুষকে, অবর্ণনীয় দুর্দশায় চরমে ওঠে কবলিত জনগণের জীবনাচরণ। বিচ্ছিন্নভাবে অল্পবিস্তর ত্রাণ বিতরণ কিংবা ‘লোক দেখানো’ নামমাত্র অর্থকড়ি সহায়তার বন্দোবস্ত হয় ঠিকই, তবে তা বানভাসী মানুষের প্রয়োজনের বিপরীতে সিকি ভাগেরও কম। বন্যাকবলিত মানুষের ত্রাতা হয়ে ফি বছর ‘অমীয় বাণী’ আওড়ানো ‘ব্যক্তিবর্গ’কে দিনশেষে খুঁজে পাওয়ায় দায় হয়ে ওঠে। বানভাসীর কাঁধে হাত রেখে ত্রাণের প্যাকেট উচিয়ে ধরে ‘ফটোসেশন’ শেষ হলেই ‘রক্ষাকবচ’ মার্কা বক্তৃতাসমেত হাওয়ায় অদৃশ্য হন তারা। বানের জলে ভাসতে থাকে হতভাগা মানুষ; পরের বছরেও ‘হয়ে ওঠে না’ অবস্থার পরিবর্তন- ফিরে আসে চিরচেনা আগের দৃশ্য।

প্রতিবছর বানের জলে ভাসতে থাকা ‘ভেলাবাসী’ মানুষের জন্য এ সংবাদ নিশ্চল ‘মূর্তিমান বিভীষিকা’র মতো। বিগত বছরগুলোতে নিদ্রাভঙ্গের কারণ হয়ে ওঠা বন্যার বিষাক্ত ছোবল এবারও ভোগাবে কেপালপোড়া এসব মানুষজনকে; কেননা, তাদেরকে রক্ষায় ‘ব্যবস্থাপাতি’র আলামতের ছিটেফোটাও তো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠতেই পারে- প্রতিবারের মতো প্রতিশ্রুতি এবারও কি ‘ফাইলেই বন্দী’?


জৈষ্ঠের অর্ধভাগও শেষ হয় নি। বর্ষা আসতে ঢের দেরি। তবে এরই মধ্যে বানের পানি ভাসাতে শুরু করেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। পাউবো আগাম বন্যার পূর্বাভাস জানিয়েছে। দেশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে দিন পনেরোর মধ্যে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের নিম্নভূমি প্লাবিত হবে বলে খবর এসেছে। শোনা যাচ্ছে, বন্যা পরিস্থিতির বিস্তৃতি ঘটে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে মধ্যাঞ্চলও। প্রতিবছর বানের জলে ভাসতে থাকা ‘ভেলাবাসী’ মানুষের জন্য এ সংবাদ নিশ্চল ‘মূর্তিমান বিভীষিকা’র মতো। বিগত বছরগুলোতে নিদ্রাভঙ্গের কারণ হয়ে ওঠা বন্যার বিষাক্ত ছোবল এবারও ভোগাবে কেপালপোড়া এসব মানুষজনকে; কেননা, তাদেরকে রক্ষায় ‘ব্যবস্থাপাতি’র আলামতের ছিটেফোটাও তো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠতেই পারে- প্রতিবারের মতো প্রতিশ্রুতি এবারও কি ‘ফাইলেই বন্দী’?
বিগত সময়ে দেশব্যাপী বানের জল উদ্দাম তা-বলীলা দেখিয়েছে। বাঁধভাঙা বন্যার উন্মত্ততা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বহু জীবন। চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছে বহু সাজানো স্বপ্ন। খোলা তলোয়ার শাণিয়ে রক্তাত্ত করেছে জানমাল, তছনছ করেছে বন্যাকবলিত মানুষের ‘বসতভাটি’। সহাসম্বল খোয়ানো নিঃস্ব-রিক্ত মানুষজনকে পথে বসিয়েছে। এসব দৃশ্য কল্পনাতেও অপ্রত্যাশিত!


নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে হুহু করে। আর এর সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিবছর বানের পানিতে ভাসতে থাকা মানুষের শঙ্কা। এবছর জানমালের নিরাপত্তায় আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। মাথায় রাখতে হবে, এখনো করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি মানুষজন। নানার ধরণের সমস্যা মাথায় নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী মানুষ। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বমুখীতায় নাভিশ্বাস উঠছে তাদের। এসবের মধ্যে নতুন উপদ্রব হিসেবে বন্যার মতো আগ্রাসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করা তাদের জন্য ‘শুন্য হাতে বাঘের মোকাবিলা’ করার সামিল হয়ে উঠবে!


যেসব এলাকায় বন্যা সংঘটিত হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেসব এলাকায় যথাযথ ‘প্ল্যান’ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যতদ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করতে হবে। প্রতিবছরই এসব এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় বিধায় এসব এলাকায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ‘চিরচেনা’ বিধায় কাজ সহজতর হবার কথা। দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা না গেলে পূর্বের সময়গুলোর মতো এবারও জনগণকে বানের জল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আগেভাগেই এসব এলাকায় কাজ শুরু করতে পারে এনজিওগুলো। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে কিংবা আগাম প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি জানমাল রক্ষায় এনজিওগুলোকে বৃহৎ পরিসরে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সবাই একাট্টা হয়ে বন্যা মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। তা না হলে, এবারও চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে প্রতিবছর বানের জলে ভাসতে থাকা এসব হতভাগা মানুষকে।