ব্যাটারদের বদান্যতায় চট্টগ্রাম টেস্ট হয়েছে ড্র। আজ থেকে মিরপুরে শুরু হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। মিরপুরে বেশিরভাগ টেস্টের রেজাল্ট হয়। আর সেই রেজাল্ট নিজেদের পক্ষে আনার সুযোগ দেখছেন বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক। আর সেটা হলে প্রথমবারের মতো লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়বে টাইগাররা।
মিরপুরে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেন, ‘আপনি মিরপুরে খেলেন বা দেশের বাইরে, সুযোগ সবসময়ই থাকে। সুযোগটা কীভাবে দেখছেন, এটা হলো সবচেয়ে বড় ব্যাপার। কন্ডিশন বা সবকিছুর কথা চিন্তা করলে, এটা (ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়) ভালো সুযোগ। সর্বোচ্চ সুযোগ না, তবে সুযোগ। সুযোগ সবসময় থাকে, এটাও আমাদের জন্য সিরিজ জেতার আরেকটা সুযোগ।’ মিরপুরে প্রায় টেস্টেরই রেজাল্ট আসে। গত ডিসেম্বরে বৃষ্টি বাগড়া দিলেও আড়াই দিনে শেষ হয়েছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার টেস্ট। সে প্রসঙ্গে মুমিনুল বলেন, ‘মিরপুরে ফল ছাড়া ম্যাচ খুব কমই হয়। শেষ কবে ফল আসেনি বলা কঠিন। সবসময় ফল আসে। বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ, সঙ্গে ব্যাটিংও। কোনো জিনিস নিয়ে কাজ করলে জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে, অবশ্যই আমরা পরিকল্পনা করি।’
ইনজুরির কারণে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সিরিজে নেই পেসার তাসকিন আহমেদ। চট্টগ্রাম টেস্ট খেলে ইনজুরিতে শরিফুল ইসলাম। নেই মোস্তাফিজুর রহমানও। শেষ টেস্টের আগে পেসার সংকটে বাংলাদেশ। তবে বিষয়টি অস্বস্তির হলেও ইতিবাচক দিক খুঁজছেন ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক। তার মতে, এটা তরুণদের জন্যও সুযোগ। মুমিনুল বলেন, ‘মাঝে মাঝে এমন বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। তাসকিন যতদিন খেলেছে খুব ভালো বোলিং করেছে। শরিফুলও ভালো অবদান রেখেছে টেস্ট দলে। ওদের জায়গায় যারা খেলবে তাদের জন্য এটা বিরাট সুযোগ। সেইসঙ্গে আমার জন্যও একটা সুযোগ, ওদের দেখে নেওয়ার। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আমি চাই আমার একঝাঁক পেসার থাকুক, স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হোক।’
পেসার সংকট থাকলেও একাদশে তিন পেসারও থাকতে পারে। যদিও সেটা হয়তো সম্ভব না। কিন্তু মুমিনুল আভাস দিলেন তেমনি, ‘আমি জানি না, আমি অধিনায়ক হওয়ার পর আপনারা এক পেসার পেয়েছিলেন কিনা। মনে হয় না এক পেস বোলার খেলবে। এমনও হতে পারে তিনটাও খেলতে পারে।’ মিরপুরের উইকেট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, মিরপুরের উইকেটে সবসময় রেজাল্ট হয়। এখানে বোলিংটা নিখুঁত হতে হয়ে। শুধু তাই নয়, ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই ভালো করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও সে চেষ্টা করব। চেষ্টা করব দল হিসেবে খেলার। অ্যাফোর্ট দেওয়ার। চেষ্টা করব ফল পক্ষে আনার।’
স্কোয়াডে আছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার খেলা নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন, মোসাদ্দেকই খেলবে? এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। হয়তো ওরই খেলার সম্ভাবনা বেশি। আপনি যদি স্পিন বিভাগ দেখেনÑ তাইজুল (ইসলাম) গত এক-দুই বছর ধরে খুব ভালো বল করছে। সাকিব ভাই তো গত ম্যাচে খুব ভালো করেছেন। মোসাদ্দেক যদি খেলে, তাহলে হয়তো ওর ভূমিকা একটু ভিন্ন হবে। মাঝেমধ্যে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তো এভাবেই এ পরিস্থিতি থেকে কাটিয়ে উঠতে হবে। মোসাদ্দেক যদি খেলে ওকে ভালোভাবে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করাটা হবে গুরুত্বপূর্ণ। সাকিব ভাই, তাইজুল যেহেতু আছে, ওদের নিয়ে আমি অনেক বেশি আত্মবিশ^াসী। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না।’
পেসার খালেদ আহমেদকে নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আমি সবসময় আশাবাদী থাকতে পছন্দ করি। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক ভালো বল করেছিল, যেটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। (ঢাকা টেস্টে) ওই অনুযায়ী হয়তো ভালো করতে পারিনি। লেন্থ হয়তো পিক করতে পারেনি। দেশের ভেতরে বেশিরভাগ সময় আমরা ঢাকায় খেলি। ঢাকায় অনুশীলন করি, প্রচুর ম্যাচ খেলি। আমার কাছে মনে হয়, এ কন্ডিশন ও জানে। নতুন বলে কোথায় বোলিং করবে, পুরান বলে কোথায় বোলিং করবে। আমার মনে হয়, এ টেস্টে ও খুব ভালোভাবে ব্যাক করবে। ইবাদত যদি খেলে, আমার মনে হয়, এটা ভালো একটা সুযোগ। ইবাদতের জন্য, সঙ্গে আমার জন্যও ওকে কন্টিনিউ করার জন্য বিরাট সুযোগ আমার কাছে।’
দলে থাকা রাজার খেলার কোনো সম্ভাবনা আছে? মুমিনুল বলেন, ‘আপাতত হয়তো সম্ভাবনা নেই। তার মানে এ না ওকে ফেলে দিব। হয়তো প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে।’ পেছনের কথা বাদ দিয়ে সামনের ৫টি দিনে মুমিনুলের চোখ এখন। তিনি বলেন, ‘আগামী পাঁচ দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পাঁচ দিনে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা দিন মাঠে আমাদের কেমন এটিটিউড থাকে, কীভাবে পজিটিভ থাকি এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১০ দিন খেলা কঠিন, আমার মনে হয় না।’ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্রে এখন পর্যন্ত সাতটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুধু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই জয় পেয়েছে মুমিনুল হকের দল। একটিতে ড্র, বাকি পাঁচটিতে হার।