logo
আপডেট : ২৩ মে, ২০২২ ১২:৩২
‘ভাবিবার সময় আসিয়াছে’
পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য রক্ষা অতি জরুরি
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘ভাবিবার সময় আসিয়াছে’

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

জৈষ্ঠ্যের শুরুর সপ্তাহ শেষ হলো সবে। বর্ষাকাল আসতে সপ্তাহ তিনেক বাকি। অথচ এরই মধ্যেই ‘নাজেহাল’ অবস্থা শুরু হয়ে গেছে-প্রকৃতি যেন ঘিরে ধরছে চারপাশ থেকে! সিলেটে বন্যার জলে ভাসছে মানুষ, ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে জনপদ। বিশেষ করে, দেশের পশ্চিমাঞ্চলকে ধ্বংসলীলায় ছিন্নভিন্ন করেছে কালবৈশাখী ঝড়। দিন যত গড়াচ্ছে, বজ্রপাত বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। চোখে জল নিয়ে বছর পার করতে হচ্ছে হাওরাঞ্চলের মানুষকে। দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে লবানাক্ততা, খাবার পানির সংকট প্রকটতর হয়ে উঠছে দিনদিন। নদনদীগুলোতে কাঙ্ক্ষিত মৎসকূলের দেখা মিলছে না মৌসুমের সময়েও। পশুপাখি আক্রান্ত হচ্ছে নানান সব রোগে, উদ্ভিদকূল ভুগছে হরেক রকম বালাইয়ে। এই যে এত সব প্রতিকূলতা- এসব কি প্রকৃতির ‘খেয়ালীপনা’, প্রকৃতিই কি এর জন্য একমাত্র দায়ী? জীবকূলের টিকে থাকার স্বার্থে এ বিষয়ে ‘ভাবিবার সময় আসিয়াছে’।

আমরা পরিবেশ রক্ষা নিয়ে বহু কথা বলছি, অথচ নিজেই পরিবেশ দূষণে মেতে উঠছি! এই সংস্কৃতি থেকে সত্ত্বর বের হয়ে আসতে হবে। পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। অন্যথায়, ‘চোকাইতে হইবে কঠিন মূল্য’


বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে কয়েক দশক ধরেই। এ সময়কালে পরিবেশ-প্রতিবেশ তথা জীববৈচিত্র্যে পড়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের অব্যাহত ক্ষতিকর প্রভাব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ুর ‘স্বাভাবিকতা’ হারানোর ফলে চিরচেনা আবহাওয়া অবিশ্বাস্যভাবে পরিবর্তিত হয়ে চলেছে! সাধারণত যে সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেসময়ে প্রখর রৌদ পরিরক্ষিত হতে দেখা যাচ্ছে। ভরপুর শীত মেসৈুমেও দেখা মিলছে না ঠা-ার আমেজ। গা ঝলসানো দাবদাহ চলছে তো চলছেই, বৃষ্টি কিংবা বাতাসের দেখা মিলছে না। আবার, শীত বহু আগে বিদায় নিলেও রেখে যাচ্ছে কুয়াশা! এমনকি, কোনো এলাকায় হঠাৎ ঝুমবৃষ্টি হলেও ঠিক তার পাশের এলাকার ঝকঝকে আকাশে গ্রীষ্মের তাপদাহ। আবার হালকা ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই বিকট বজ্রপাত হাজির হয়ে কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ!


এরকমটা ছিল না আগেকার দিনে। এসবের দায় প্রকৃতির নয়। মনৃষ্যসৃষ্ট এসবের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকেই। পরিবেশ দূষণের নির্বিচার বলি হচ্ছে শুধু নিরীহ-অবলা প্রাণীকূল। পরিবেশকে আজকের প্রতিকূল অবস্থায় আনার জন্য দায়ী একমাত্র আমরাই। নির্বিচার বন উজাড়, জ্বালানী পোড়ানোর মহোৎসব, পরিবেশের মারাত্মক দূষণকার্য, উপকারী উদ্ভিদ-পতঙ্গের আবাসস্থল বিনাস-কি করি নাই আমরা! এসবের পরও সচেতন হয়ে উঠতে পারিনি আমরা। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে উচ্চঝঁকির কথা বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, তার জন্য দায়ী আমরাই।


বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বন্যাপরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে। বর্ষাকাল শুরুই হলো না, অথচ বানের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শীতের সময়ে দেশে প্রতিবছরই রেকর্ড গড়ছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গ্রীষ্মকালে চড়ে বসছে তাপমাত্রার পারদ। এবারের বর্ষার জল জনজীবনে যে ‘রেকর্ডভাঙা’ ভোগান্তি বয়ে আনবে, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে এখনই। দেশে আগাম বন্যার সতর্কসঙ্কেত শোনা গেছে। বড্ড চিন্তার বিষয়। নানান প্রতিকূলতার মধ্যে ‘বানের জলের আতঙ্ক’ মাথায় নিয়ে মানুষজন যারপরনাই চিন্তিত।


পরিবেশ দিবস কিংবা জীববৈচিত্র্য দিবসসহ নানান দিবস পালনের ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এসবে কি ‘মুক্তি মিলিবে’? দিবস আয়োজন চলছে হরদম; অথচ পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে সচেতনার বালাই নেই। বিষয়টি ‘বাঘের নির্বিচার হরিণ শিকার দেখে হাহুতাশ শেষে হরিণের মাংস দিয়ে আহার’ করার মতো। আমরা পরিবেশ রক্ষা নিয়ে বহু কথা বলছি, অথচ নিজেই পরিবেশ দূষণে মেতে উঠছি! এই সংস্কৃতি থেকে সত্ত্বর বের হয়ে আসতে হবে। পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। অন্যথায়, ‘চোকাইতে হইবে কঠিন মূল্য’।