logo
আপডেট : ২৪ মে, ২০২২ ১০:০৮
অর্থপাচার
পিকে হালদারের সহযোগিরা বহাল তবিয়তে
বিশেষ প্রতিনিধি

পিকে হালদারের সহযোগিরা বহাল তবিয়তে

পিকে হালদার (ফাইল ফটো)

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে ৩৭টি মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার এখন ভারতের কারাগারে।

বাংলাদেশ থেকে পাচার করা টাকায় সেখানে গড়েছেন আবাসনসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহযোগিতায় তাকে ভারত সরকার গ্রেপ্তার করেছে।

এই এক পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করা গেলেও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

অর্থপাচারকারীদের মধ্যে খণ্ডিত অংশের নাম সাধারণ মানুষের সামনে আসে ২০১৬ সালের শেষ দিকে।

প্যানডোরা পেপার্স, পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়।

ওই তালিকায় নাম প্রকাশের পরই সে সময়কার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, এরপর তাকে কারাগারেও যেতে হয়। এখন তিনি দেশ ছাড়া। কিন্তু ওই তালিকায় যেসব বাংলাদেশির নাম প্রকাশিত হয়েছে, তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এখনো তাদের আইনের আওতায় আনা যায়নি। তাদের গ্রেপ্তার বা তাদের পাঠানো অর্থ ফিরিয়ে আনতে দেশের দুর্নীতি দমনে দায়িত্বরত সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

এমনকি পানামা পেপার্সে যাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্দোষ হিসেবে দুদকের সার্টিফিকেট নিয়ে দেশ ছেড়েছেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, পিকে হালদার ধরা পড়েছে। অন্যদের কী হবে?

বিদেশে অর্থ পাচারকারী হিসেবে প্যানডোরা পেপার্স, পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে চার দফায় বাংলাদেশি ৯৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়েছে।

এই তালিকা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে।

২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশের ২৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়।

পরবর্তীতে আরো তিনদফায় বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়েছে।

এদের মধ্যে গত বছর ৫ ডিসেম্বর ৫১ ব্যক্তি ও ১৮টি প্রতিষ্ঠানের (সব মিলে ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান) নামের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অর্থপাচারকারী হিসেবে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে দুদক ও সিআইডির প্রতি গত ৩০ জানুয়ারি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এছাড়া সুইস ব্যাংকসহ বিদেশি ব্যাংকে যেসব বাংলাদেশি টাকা রেখেছেন তাদের নামের তালিকা দাখিল করতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই নির্দেশের পর বিষয়টি তদন্তের জন্য সিআইডির ডিআইজিকে (অর্গানাইজড ক্রাইম) সভাপতি করে দুদক ও বিএফআইইউ প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি রাখতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

তবে বিদেশে অর্থ পাচারকারী হিসেবে প্যানডোরা পেপার্স, পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম প্রকাশিত হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এরই মধ্যে দুদকের কঠোর সমালোচনা করেছেন হাইকোর্ট।

গত ৬ মার্চ দুদককে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, দয়া করে দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আদেশ প্রতিপালন করুন।

আইনে আপনাদের অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কারো বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন, ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে পারেন, মামলা করতে পারেন, নিজেরাই তদন্ত করতে পারেন।

সম্পদের হিসাব চাইতে পারেন। এত ক্ষমতা। আর কি চান? এত ক্ষমতা পাবার পরও যদি ঠিকমতো কাজ না হয় তাহলে তো সেটা দুঃখজনক।

আদালত বলেন, প্রকৃতপক্ষে যারা অপরাধী, অর্থপাচারকারী, তাদের ধরুন। শাস্তি দিন। আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে কাউকে আমরা ছাড় দিতে প্রস্তুত নই।’
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ভোরের আকাশকে বলেন, অর্থ পাচারকারী হিসেবে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে দুদক এরই মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

এর বাইরে আর কোনো অগ্রগতি আমার জানা নেই। কোনো অগ্রগতি থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে আদালতকে জানানো হবে।