২৪ রানে ৫ উইকেট পতনের পর মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে শ্রীলংকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে দিন শেষে ২ উইকেটে ১৪৩ রান করেছে শ্রীলংকা। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে এখনও ২২২ রানে পিছিয়ে লংকানরা। লিটন ১৪১ রানে আউট হলেও, মুশফিক অপরাজিত ১৭৫ রান করেন।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম দিন শেষে ৮৫ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭৭ রান করেছিলো বাংলাদেশ। মুশফিক ১১৫ ও লিটন ১৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাবধানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিলেন মুশফিক ও লিটন। তবে দিনের অষ্টম ওভারে লিটনকে আউট করে শ্রীলংকাকে দারুন সূচনা এনে দেন পেসার কাসুন রাজিথা। ৯৩তম ওভারের প্রথম বলটি ভেতরের দিকে ঢুকছিলো, তখন ব্যাট পেতে দেন লিটন। বল তার ব্যাটে চুমু খেয়ে দ্বিতীয় স্লিপে মেন্ডিসের হাতে জমা পড়ে। ফলে শেষ হয় লিটনের ক্যারিয়ার সেরা দুর্দান্ত ১৪১ রানের ইনিংসটি। ২৪৬ বল খেলে ১৬টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান লিটন।
সেই সাথে ৫১৩ বলে ২৭২ রানে শেষ হয় মুশফিক-লিটনের জুটি। শ্রীলংকার বিপক্ষে যেকোন উইকেটে এটি টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২৪ রানে ৫ উইকেট পতনের পর জুটি গড়েছিলো মুশফিক-লিটন।
লিটনকে ফিরিয়েই ক্ষান্ত হননি রাজিথা। একই ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে ৩২ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা মোসাদ্দেক হোসেনকেও বিদায় দেন রাজিথা। রাজিথার আউট সুইংয়ের বল খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতে না পারা মোসাদ্দেক। মোসাদ্দেককে শিকার করে ১১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট নিলেন রাজিথা।
দলীয় ২৯৬ রানেই ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট পতনের পর চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। তারপরও তাইজুলকে নিয়ে দলের স্কোর ৩শ পার করেন মুশফিক। এরপর রানের গতি বাড়ান তিনি। এতে ২৯১ বলেই টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মত দেড়শ রান স্পর্শ করেন মুশফিক। শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয়বার। এর আগের চারটি দেড়শর মধ্যে তিনটিতেই ডাবল-সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। তাই আজও একটি ডাবল-সেঞ্চুরির প্রত্যাশায় ছিলো বাংলাদেশ।
তবে মুশফিকের দেড়শ রানের পর ফিরতে হয় তাইজুলকে। পেসার আসিথা ফার্নান্দোর বাউন্সার সামলাতে না পেরে, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২টি চারে ৩৭ বলে ১৫ রান করা তাইজুল। দশ নম্বরে নামা খালেদ আহমেদ ২ বলের বেশি খেলতে পারেননি। আসিথার চতুর্থ শিকার হন তিনি।
দলীয় ৩৪৯ রানে নবম উইকেট পতন ঘটে বাংলাদেশের। ফলে প্রথম সেশনের মধ্যাহ্ন-বিরতির আগে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে টাইগাররা। কিন্তু সেটি হতে দেননি মুশফিক। শেষ ব্যাটার এবাদত হোসেনকে নিয়েই মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান মুশফিক। তখন বাংলাদেশের রান ৯ উইকেটে ৩৬১ রান।
তবে বিরতির পর ২০ বলের মাথায় পতন হয় বাংলাদেশের শেষ উইকেটের। মুশফিকের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন এবাদত। ৩৬৫ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। রানের খাতাই খুলতে পারেননি এবাদত। বাংলাদেশের ইনিংসে মোট ছয় ব্যাটার খালি হাতে আউট হলেন। সতীর্থ বিদায় নিলে এক প্রান্ত আগলে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ৩৫৫ বল খেলে ২১টি চার মারেন তিনি। শ্রীলংকার রাজিথা ৬৪ রানে ৫টি ও আসিথা ৯৩ রানে ৪টি উইকেট নেন।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে ব্যাট করতে নামে শ্রীলংকা। বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে দারুন ব্যাট করেন লংকান দুই ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো ও অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। ৯৫ রানের জুটি গড়েন তারা। অবশ্য প্রথম ওভারের শেষ বলে আউট হয়েছিলেন ওশাদা। লেগ বিফোর আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।
১৫তম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ওশাদাকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলে আউট করেছিলেন স্পিনার তাইজুল। কিন্তু এবার আম্পায়ারস কলের কারনে রক্ষা পান ওশাদা। ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ওশাদাকে জীবন দেন সাকিব। উইকেট ছেড়ে খেলে সাকিবের বলে তাকেই ক্যাচ দিয়েছিলেন ওশাদা। বলটি হাতের মধ্যে রাখতে পারেননি সাকিব। পরে সাকিবকে ছক্কা মেরেই হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ওশাদা।
তিনবার জীবন পাওয়া ওশাদাকে ৫৭ রানে আউট করেন এবাদত। অফ-স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে স্লিপে শান্তকে ক্যাচ দেন ওশাদা। ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৭ রান করেন তিনি। তিন নম্বরে নেমে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কুশল মেন্ডিস। দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়ে ১১ রান করা মেন্ডিসকে লেগ বিফোর আউট করেন সাকিব।
এরপর নাইটওয়াচম্যান রাজিথাকে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন করুনারত্নে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭০ রানে অপরাজিত তিনি। শুন্য হাতে অপরাজিত রাজিথা। বাংলাদেশের এবাদত ৩১ রানে ও সাকিব ১৯ রানে ১টি করে উইকেট নেন।