স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যের সঙ্গে আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুই জড়িত। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোনোকিছুই ভালো থাকে না। সাফল্য, মানসিক প্রশান্তি তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রাকৃতিকভাবে শরীরে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা কিন্তু খুবই জরুরি। বিশেষ করে ভোরবেলার তাপমাত্রা আর দুপুরবেলার তাপমাত্রার যথেষ্ট ফারাক থাকছে এখন।
ঠান্ডা-গরমের এই তারতম্য প্রভাব ফেলে মানবদেহে। মানব শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে; কিন্তু তার জন্য শীতল তাপমাত্রা হচ্ছে ২০ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তা মানব শরীরের সহ্যসীমার মধ্যে থাকে।
কিন্তু তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হলে মানব শরীর সহ্য করতে পারে না। তখন নানা রকম অস্বস্তি ও সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে মানুষের হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
গরমকালে নানা ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার এবং প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকাও যথোপযুক্ত হওয়া উচিত। সব সময় ওষুধ নয়, ভরসা রাখুন প্রতিদিন খাবারেই। দেখে নিন কোন কোন খাবার এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে...
পানি ও পানিজাতীয় খাবার
গরমের সময় পানিশূন্যতা রোধে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং পানিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হয়। পানি, স্যালাইন, ফলমূলের রস, শরবত ও ডাব ইত্যাদির পানীয় শরীরে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জোগায়। এ ছাড়াও পানিজাতীয় সবজি-ফলমূল খাওয়া যেতে পারে।
যেমন তরমুজ, আনারস, জাম্বুরা, আপেল। সবজি বেশি খাওয়ার ফলে পরিপাক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। এতে করে শরীরের অস্বস্তি হ্রাস পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানিশূন্যতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, পানিশূন্যতার জন্য স্ট্রোক পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রোটিন
গরমে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে প্রোটিন। প্রোটিন হচ্ছে একটি পুষ্টি উপাদান, যা মানবদেহের বিকাশ ঘটায়। তবে প্রোটিন কার্বন হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত। আমাদের খাদ্যের উপাদান ৬টি। আর এই ৬টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন যেমন শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তেমনই পেশির গঠনেও কিন্তু সাহায্য করে।
সেই সঙ্গে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিও সরবরাহ করে। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় প্রোটিন রাখা উচিত। যেমন- শাকসবজি, ফুলমূল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, টার্কি মুরগি, কলিজা, মাছের ডিম, আলু, ডাল, ওটস, বাদাম, পেয়ারা, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, শিমের বীজ, প্রোটিন পাউডার ইত্যাদি।
গ্লুকোজ
গরমে হাইড্রেটেড থাকা খুবই জরুরি। ওয়ার্কআউটের পর গ্লুকোজ খেলে শরীরে শক্তি ফিরে আসে। তাই ক্লান্তি দূর করতে, শরীরকে হাইড্রেট রাখতে এবং পেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান দিতে কিন্তু গ্লুুকোজ অবশ্যই খাবেন। সেই সঙ্গে এই গ্লুুকোজ পেশির কর্মক্ষমতা উন্নত করে। গ্লুকোজ হাতের সামনে যদি না থাকে তাহলে নুন-চিনি-লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে খান।
পিনাট বাটার
পিনাট বাটার আমাদের ক্ষতিকারক চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। বিশেষত হার্টের ক্ষেত্রে তা কিন্তু খুবই ভালো। এ ছাড়াও এই বাটারের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীর থেকে চিনির পরিমাণ কমাতে কিন্তু বিশেষ সাহায্য করে এই বাটার।
এ ছাড়াও এর মধ্যে থাকে অলিক অ্যাসিড, যা মূলত মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই ওলিক অ্যাসিডই আমাদের ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও বাদামের মধ্যে থাকে লিনোলেনিক অ্যাসিডÑ যার থেকে পাওয়া যায় ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড।
মাল্টি ভিটামিন
শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দুর্বলতা কাটাতে কিন্তু মাল্টিভিটামিনের প্রয়োজন আছে। এ ছাড়াও লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে, প্রয়োজনীয় খনিজের ঘাটতি মেটাতে এবং পেশি শক্তিশালী করতেও ভূমিকা রয়েছে এই মাল্টিভিটামিনের। তবে মাল্টিভিটামিনযুক্ত মিনারেলের ট্যাবলেট কখনো সুষম খাবারের পরিপূরক হতে পারে না।
তা ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ শরীরের জন্যও ক্ষতিকর। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন এ পেতে পারেন গাঢ় সবুজ শাকসবজি, গাজর, লাল শাক, বাঁধাকপি, মটরশুটি ইত্যাদিতে। ভিটামিন বি পেতে পারেন কড, হাঙর প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছের যকৃত নিঃসৃত তেল, দুধ, ডিম মাখন, পনির ইত্যাদিতে।
ঢেঁকি ছাঁটা চাল, লাল আটা, টমেটো, পালং শাক, অংকুরিত ছোলা, মটরশুটি, পেঁয়াজ ইত্যাদিতে। ভিটামিন সি পেতে পারেন সব রকমের টাটকা ও টক ফল, যেমন- লেবু, আম,আমলকী, টাটকা শাক ইত্যাদিতে।
ভিটামিন ডি পেতে পারেন দুধ, মাখন, ডিম, ইলিশ মাছের তেল, কডলিভার অয়েল, অস্থি মজ্জা, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি (সূর্যের আলো)তে। ভিটামিন ই পেতে পারেন বাদাম, শস্যবীজ, তুলার বীজের তৈল, সবুজ শাকসবজি, লেটুস ইত্যাদিতে। ভিটামিন কে পেতে পারেন বিভিন্ন প্রকার ডাল, সবুজ শাকসবজি, গাজর ও টমেটোতে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গুণাবলিসহ বেশকিছু শারীরিক সুবিধা আমাদের দেয়। যার ফলে ওজন কমে, কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকে নিয়ন্ত্রণেÑ সেই সঙ্গে কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রাও রাখে নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়াও বিপাক থেকে ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে এই ভিনেগার।
রক্তে লোহিত কণিকা উৎপাদন, হজমে সাহায্য করতেও ভূমিকা রয়েছে এই ড্রিংকের। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে কিন্তু কৃত্রিম কোনো রঙ থাকে না।
ভাজা-পোড়া এবং জাঙ্ক ফুডকে ‘না’ বলুন
প্রচণ্ড গরমে ভাজা-পোড়া কিংবা জাঙ্ক ফুডজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। এ জাতীয় খাবার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়। এ ছাড়াও ক্যালোরি, সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। এসব খাবারে শরীরে তাপমাত্রা বেশি হওয়ার পাশাপাশি বদহজমের আশঙ্কাও থাকে।