logo
আপডেট : ২৬ মে, ২০২২ ১০:০৮
ঝুঁকিমুক্ত হয়নি দেশের করোনা পরিস্থিতি
নিখিল মানখিন

ঝুঁকিমুক্ত হয়নি দেশের করোনা পরিস্থিতি


আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। জাতীয় পর্যবেক্ষণে দেশের করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। দেশে বিরাজ করছে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার এক বছর পর করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে। তাই দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (২৫ মে) বিকাল ৪টায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়াল্ডোমিটারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশে^র দুই শতাধিক দেশের মধ্যে বিদ্যমান ক্রিটিক্যাল করোনা রোগী সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো সপ্তম এবং সক্রিয় করোনা রোগী সংখ্যার ভিত্তিতে ৫১তম স্থানে রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৬২তম। করোনা টেস্ট করানোর বিবেচনায় পিছিয়ে পড়েছে দেশ। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৫২তম বলে জানিয়েছে ওয়াল্ডোমিটার।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে করোনায় দৈনিক মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা এবং শনাক্তের হারের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে মানুষের আচরণ ও করোনাবিষয়ক বেশ কয়েকটি সূচকে দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। উপসর্গ থাকলেও মানুষ করোনা টেস্ট করাচ্ছে না এবং হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। দৈনিক সংগৃহীত নমুনার সংখ্যা কমে গিয়ে তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে থাকছে। ফলে করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। করোনা প্রবেশের গত দুই বছরেরর বেশি সময়ে দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র জানা হয়ে ওঠেনি। বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে করোনা সীমিত নমুনা সংখ্যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে আসছে। এমন সুযোগে দেশে বিরাজ করছে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা। করোনাভাইরাস থেকেও যেন নেই।

এমন পরিস্থিতিতে সতর্কতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুসতাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েেেছ।

কিন্তু পরবর্তী ঢেইয়ের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে এবং বিশ্বের অনেক দেশে শূন্যের কোঠায় গিয়েও নতুন ঢেউয়ের ভয়ংকর রূপ ধারণ করার ঘটনা রয়েছে। তাই করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতা দেখা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই করোনা সংক্রমণের ওঠানামার খেলা চলে আসছে। যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যায় তখন মানুষ অসতর্ক হয়ে যায়, ফলে সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যায়। আমরা এমনিতেই অসতর্ক, তাই দেশে সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে। টিকা মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়, সংক্রমণ ঠেকাতে পারে না।

তাই টিকা গ্রহণ করলেই পুনরায় সংক্রমিত হবেন না, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে করোনাভাইরাস পুরোপুরি বিদায় না হবে ততদিন সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবেই। সংক্রমণের হ্রাস-বৃদ্ধির খেলা চলবে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে আমরা কোনোভাবেই ঝুঁকিমুক্ত ভাবতে পারি না। কমে গিয়ে হঠাৎ প্রবল হয়ে ওঠার ঘটনা রয়েছে। তাই নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই করোনা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমলে কিছুদিন পরই সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়। স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে তা বলার সময় আসেনি।

করোনা মোকাবিলার জন্য গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি। জনসংখ্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।

তাই এক জায়গায় সংক্রমণ শুরু হলে সারাদেশে ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগে না। দেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়ে গেছে বলে জানান ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।