logo
আপডেট : ২৬ মে, ২০২২ ১২:০৭
নতুন হলের স্বপ্ন দেখিয়ে আবারো গণরুমে
মেহেরব হোসেন, জাবি

নতুন হলের স্বপ্ন দেখিয়ে আবারো গণরুমে

গণরুম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৫০তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের স্বশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে ২৩ মে। এর আগে ৯ মার্চ থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। দীর্ঘ আড়াই মাস চলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এদিকে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মানাধীন নতুন হলগুলোতে নবীন শিক্ষার্থীদের উঠানোর আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে করোনা পরবর্তী অন্যান্য সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস স্বশরীরে চলমান থাকলেও নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয় অনলাইনে। কিন্তু, এখন শিক্ষার্থীদের নতুন হলে উঠার স্বপ্নে দেখা দিয়েছে গুড়েবালি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে দেখে তাদের জন্য প্রশাসন কোন সীটের ব্যবস্থা করেনি। শুধুমাত্র হল বরাদ্দ দিয়েছে । ফলে নতুন ক্যাম্পাসে এসে বিপাকে পড়েছে নবীন শিক্ষার্থীরা। এক প্রকার বাধ্য হয়ে উঠতে হচ্ছে হলগুলোর জরাজীর্ণ গণরুমগুলোতে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল প্রশাসনের উদাসীনতা, সেশন জট, অছাত্রদের হলে অবস্থান প্রভৃতি কারণে মূলত আবাসন সংকট তীব্রতর হচ্ছে। প্রশাসন নিয়মিত হল পরিদর্শন করে না। ফলে দুর্ভোগের সুরাহা হচ্ছে না। বিশেষ করে ছাত্র হলগুলোতে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের রুম দখল করার সংস্কৃতি আসন সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। প্রতিটি চার জনের কক্ষে ক্ষেত্রবিশেষে এসব ছাত্র নেতারা দুইজন বা একজন করে থাকেন। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলেও তারা আসন ছাড়েন না। আর হল প্রশাসনকে এ ব্যাপারে বরাবরই নীরব থাকতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসন আছে আল বেরুনী হলে ৪২৪টি, মীর মোশাররফ হোসেন হলে ৭২০টি, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৪০০টি, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৪০০টি, মওলানা ভাসানী হলে ৭৬৮টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৭৬৮টি, শহীদ রফিক জব্বার হলে ৬৪০টি, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ৩৪০টি, ফজিলাতুন্নেছা হলে ২৫২টি, জাহানারা ইমাম হলে ৫০৪টি, প্রীতিলতা হলে ৫০৪টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৫১২টি, শেখ হাসিনা হলে ৬৪৮টি, সুফিয়া কামাল হলে ৫২৫টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৬৩২টি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৫২৫টি। সব মিলে ৮,০৪৩টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রতি বছর ধারণক্ষমতার অধিক নবীন শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়ায় তাদেরকে হলের কমন রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, ছোট ছোট গণরুম, নামাজের কক্ষ, সাইবার রুম প্রভৃতি স্থানে গাদাগাদি করে থাকতে হয়।

আবাসন সংকট বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ ক্রান্তি রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে আবাসন সংকট সমাধান করতে পারে । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাদের সমর্থনে কাজ করে তখন এই আবাসন সংকট কখনো সমাধান হবে বলে মনে হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার পরেও হল ছাড়েন না। আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও এখনো মিনি গণরুমে আছি।

নতুন ভর্তি হওয়া ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন পত্রিকা থেকে জানতে পারি আমাদের একেবারে নতুন হলে উঠানোর জন্য অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে প্রশাসন । ভর্তি হওয়ার আগে শুনেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আসন বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এখন আমাদের গণরুমে ওঠানো হচ্ছে। পুর্নাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও গণরুমে থাকতে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক।

আবাসন সংকট সম্পর্কে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি মোহা. মুজিবুর রহমান বলেন,আমাদের কিছু ডিপার্টমেন্টে সেশনজট থাকায় মূলত এই আবাসন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরো তীব্র হওয়ার কারণ অনেকের স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার পরেও হল ছাড়েন না। আর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী যারা হলে আছেন আমরা নিয়মিত তাদের সাথে কথা বলেছি যাতে যাদের স্নাতকোত্তর শেষে তারা যেন দ্রুত হল ত্যাগ করেন। আমরা প্রতিটি হলের প্রভোস্টদের সাথে কথা বলেছি যেন তারা নিয়মিত হল পরিদর্শন করেন।তবে আমরা দুই মাসের মধ্যে নতুন দুটি হলের কাজ শেষ করবো। তখন আর আবাসন সংকট থাকবে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য আসন আছে প্রায় নয় হাজারের মতো। কিন্তু বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পনের হাজার। এখানেই আমাদের কিছুটা আবাসন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের নতুন হল নির্মানের কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা দ্রুত এই আবাসন সংকট কাটিয়ে উঠবো।