logo
আপডেট : ২৬ মে, ২০২২ ২০:১৬
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পীঠস্থান প্রাচীন ভরতখালী কালী মন্দির
সুজন মোহন্ত, গাইবান্ধা থেকে ফিরে

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পীঠস্থান প্রাচীন ভরতখালী কালী মন্দির

দুইশ’ বছরের পুরোনো ভরতখালী কালী মন্দিরে প্রতিদিনই ভক্তরা আসেন মায়ের প্রতিমা দর্শন করতে

প্রায় দুইশ’ বছরের প্রাচীন ভরতখালী কালী মন্দির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র এক পীঠস্থান। প্রতিদিন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এই পীঠস্থানে সনাতন ধর্মের ভক্তরা আসেন মায়ের প্রতিমা দর্শন করতে। এ মন্দিরের প্রতিমা প্রাচীন আমলের একটি কাঠের গুঁড়ি দিয়ে। সেই থেকে এই মন্দিরের দেবীকে কাষ্ঠ কালী বলেও ডাকা হয়।

প্রাচীন এই মন্দিরটির অবস্থান গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে দক্ষিণে ২০ কিলোমিটার দূরে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের হাট ভরতখালী নামক স্থানে। এখানে বছরের বৈশাখ মাসের প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত হয় দেবী কাষ্ঠ কালীর বিশেষ পূজা ও মেলা।

মন্দিরটি সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কোনো সঠিক ইতিহাস পাওয়া না গেলেও, প্রচলিত লোক কাহিনি এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় দুইশ’ বছর আগে ঘাঘট নদী দিয়ে একটি কাঠের গুঁড়ি ভেসে আসে ভরতখালীতে। নদীর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় এক পথিক এই কাঠের গুঁড়িটি দেখতে পান। পরে সেটি তিনি তুলে বাড়িতে নিয়ে যান।

জ্বালানি কাঠের জন্য গুঁড়িটি কুড়াল দিয়ে আঘাত করলে কাঠের গুঁড়ি থেকে রক্ত বেরিয়ে আসে। এটা দেখে ওই পথিক ভয় পান।

এদিন রাতেই সেখানকার তৎকালীন জমিদার শ্রী রমনী কান্ত রায় স্বপ্নে দেখেন দেবী কালী তাকে পূজা দিতে বলছে। এই স্বপ্ন দেখে পরদিন জমিদার রমনী কান্ত কাঠের গুঁড়িটি উদ্ধার করে কালী মূর্তি তৈরি করে শুরু করেন দেবীর আরাধনা।

প্রথমদিকে এই স্থানে একটি খড়ের ঘরে দেবীকে পূজা করতেন তৎকালীন জমিদার। পরবর্তীতে খড়ের মন্দিরটিকে পাকা দালানে পরিণত করেন তিনি। সেই থেকে দেবী কাষ্ঠ কালী রূপে এই মন্দিরে পূজা অর্চনা হয়ে আসছে।

প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে মন্দিরে প্রচুর লোকজনের সমাগম ঘটে। এখানে আগত সনাতন ধর্মের লোকজন তাদের মনোবাসনা পূরণে পাঠা, কবুতর, শাড়ি, গয়না, ফল, মিষ্টান্ন এসব মানত করে থাকেন।

জামালপুর জেলা থেকে আসা শ্রী হরিদাস সরকার বলেন, গত দু’বছর আগে মায়ের এ ধামে এসে পূজো দিয়েছিলাম। মনের আশা পূরণে মানত করেছিলাম। করোনার কারণে মন্দির বন্ধ ছিল। তাই এ বছর মায়ের কাছে জোড়া পাঠা নিয়ে এসেছি।

কুড়িগ্রামের বাসিন্দা টুটুল সেন বলেন, লোকমুখে শুনেছি ভরতখালী মা অনেক জাগ্রত, মনের ইচ্ছা পূরণ করেন তাই বন্ধুরাসহ ঘুরতে এসেছি।

মন্দিরের পুরোহিত শ্রী দীনবন্ধু চন্দ্র দুলাল বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে মায়ের এই পবিত্র পীঠস্থানে পূজো করছি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মায়ের দর্শন করতে মন্দিরে ভক্তরা আসেন।’
মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী রনজিৎ চন্দ্র দাস বলেন, ‘ভরতখালীর কাষ্ঠ কালী মন্দির ২০০ বছরের অধিক প্রাচীন। এখানে বছরের বৈশাখ মাসে প্রচুর লোকজনের সমাগম ঘটে।’