ইউরোপীয় ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্ব বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে শনিবার মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। ফ্রান্সে বাংলাদেশ সময় রাত একটায় ম্যাচটি শুরু হবে। ইউরোপীয় ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্বেও ৬৬তম ফাইনাল এটি।
একদিকে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ, অন্যদিকে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল। ইংলিশ ক্লাবটি ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে দূর্দান্ত মৌসুম পার করছে। কোয়াড্রপল বা মৌসুমে চার শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ ছিল তাদের। এফএ কাপ ও লিগ কাপ জয়ের পর তাদের সামনে ঘরোয়া লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের সুযোগ ছিল। এখন অবশ্য আর তা নেই। লিগ শিরোপা তারা জিততে পারেনি। অল্পের জন্য তাদেরকে হতাশায় ভাসিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি সে শিরোপা জয় করে নিয়েছে। লিগ হারানোর হতাশা আর আক্ষেপ তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের মাঝ দিয়ে পূরণ করে নিতে পারে।
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল যখন খেলছে তখন রিয়াল মাদ্রিদও স্বাভাবিকভাবেই দূর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। তাদের সামনেও কোয়াড্রপল বা মৌসুমে চার শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ ছিল। সুপার কোপা জয়ের পর তারা লিগ জয় করেছে। কিন্তু কোপা দেল রে জিততে পারেনি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারলে তাদের ষোলোকলা পূর্ণ না হলেও উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার সব উপকরণই তারা পেয়ে যাবে।
রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে খেলার পথটা অবশ্য রূপকথাকেও হার মানাবে। অসম্ভব এক পথ পাড়ি দিয়ে তারা ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। বাঘা বাঘা সব দলকে টপকে এখানে আসতে হয়েছে তাদের। শেষ ষোলো রাউন্ড পার হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না তাদের। শেষ ষোলেতে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের কাছে প্রথম লেগে ০-১ গোলে পিছিয়ে ছিল। ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠের খেলায় প্রথমার্ধে গোল হজম করে ০-২ গোল গড়ে পিছিয়ে পড়ে তারা। এমন অবস্থায় করিম বেনজেমার ১৭ মিনিটের এক ঝলকে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে তারা কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল।
সেখানেও তাদের জন্য ছিল কঠিন প্রতিপক্ষ। ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে চেলসির কাছে হারলেও ৫-৪ গোল গড়ে তারা সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়। এখানে কম রূপকথা লেখেনি তারা। দূর্দান্ত ফর্মে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির কাছে প্রথম লেগে ৩-৪ গোলে হেরে পরবর্তী পথটা কঠিন করে তোলে। ফিরতি লেগে প্রথম গোল হজম করে কঠিন পথকে অসম্ভব করে ফেলে তারা। নিশ্চিত বিদায়! কেননা ৯০ মিনিট পর্যন্ত ৩-৫ গোলে পিছিয়ে তারা। সে অবস্থায়, ৯০, ৯১ ও ৯৫ মিনিটে তিন গোল করে রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনালে জায়গা করে নেয়।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেনজেমা চমৎকার সময় পার করছেন। একাধিকবার দলকে ফিনিক্স পাখির মতো উদ্ধার করেছেন। গোলের পসরা সাজিয়ে বসা বেনজেমা স্বাভাবিকভাবেই গোলদাতার তালিকায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। ১৫ গোল করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই রিয়াল মাদ্রিদ এ ম্যাচেও তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
সে তুলনায় লিভারপুলের পথটা ছিল অনেক সহজ। শেষ ষোলোতে ইন্টার মিলানকে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে বেনফিকার বিপক্ষে জয় পায় তারা। আর সেমিফাইনালে হারায় ভিয়ারিয়ালকে।
রিয়ালকে হারিয়ে শিরোপা জয়োৎসব করতে লিভারপুলকে অনেকটা মোহাম্মদ সালাহর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। প্রিমিয়ার লিগে ২৩ গোল করে প্রিমিয়ার লিগে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা সালাহ। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লড়াইয়ে বেনজেমা থেকে অনেকটা পিছিয়ে তিনি। গোল করেছেন আটটি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুই দলের অতীত রেকর্ডে অবশ্য ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে লিভারপুল। ছয়বার শিরোপা জিতেছে। সর্বশেষ শিরোপা জয় করে তারা ২০১৯ সালে। অন্যদিকে শিরোপা সংখ্যায় রিয়াল মাদ্রিদের দৃষ্টিসীমায় কেউ নেই। স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে তো বটেই ১৩ শিরোপা জয়ে সবার উপরে রয়েছে দলটি। সর্বশেষ তারা ২০১৮ সালে ইউরোপের ক্লাব শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল। এবার নিয়ে ১৭বার তারা ফাইনালে খেলছে। আর ফাইনাল বেশির ভাগ সময় রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে এসেছে। তাদের খেলা গত সাত ফাইনালেই তারা শিরোপা জয়ের উৎসব করেছে।