logo
আপডেট : ২৭ মে, ২০২২ ১৭:১১
কুমিল্লার চারা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা

কুমিল্লার চারা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

চারদিকে শক্ত করে বেড়া দেওয়া। তার ভেতরে নার্সারি। সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ফুল, ফল, ভেষজ ও কাঠ তৈরি হয় এমন জাতের গাছের চারাগুলো। নার্সারিতে রয়েছে গ্রিনহাউস ঘর। এই নার্সারিতে উৎপাদিত গাছের চারাগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাহাজে করে চলে যায় কাতার ও আরব আমিরাতে। এই চারা রপ্তানি করে কোটি টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান নার্সারির মালিক।

গাছের চারা রপ্তানি করা ওই নার্সারির অবস্থান কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বিজরা গ্রামে। ওই গ্রামের আবদুল মমিন প্রথম গাছের চারা রপ্তানি শুরু করেন। তার দেখাদেখি গত বছর থেকে মমিনের ভাতিজারাও গাছের চারা রপ্তানি শুরু করেন।

আবদুল মমিন জানান, ১৯৮০ সালে তিনি কাতারে যান। সেখানে চাকরি করতেন। এক সময় তার বেতন কমিয়ে দেয় কোম্পানি। নিজের অবস্থা পরিবর্তনের আশায় নার্সারির ব্যবসায়ে মনোযোগ দেন।
গত ১৫ বছর আগে থাইল্যান্ড, চায়না, মালেয়শিয়া, হল্যান্ড, সিরিয়া, মিশর, ইতালি এসব দেশ থেকে ফুল ও ফলের চারা আমদানি শুরু করেন। কাতারের লোকজনের কাছে বিক্রি শুরু করেন। কাতারে তার নার্সারি রয়েছে। ওই নার্সারির নাম আল নাইমি ল্যান্ড স্কেপিং নার্সারি।

বছর তিনেক আগে বাংলাদেশ থেকে চারা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের বাড়ি বিজরা এলাকায় এক একর জায়গায় নিজেই নার্সারি গড়ে তোলেন। নাম দেন বিজরা এন্টারপ্রাইজ। বেশ কয়েক লটে গাছের চারা রপ্তানি করেন।

আবদুল মমিন বলেন, ২০২০ সালের শুরুতে আমি প্রথম পর্যায়ে প্রথম লটের গাছের চারা পাঠিয়েছি। ওই বছর ২৫ লাখ টাকার চারা পাঠিয়েছি। তখন চারাগুলো কাতার ও দুবাইতে রোপণ করা হয়েছিল। সফল হওয়ার পর আরো পাঠাই। বছরে দুই থেকে তিনবার চারা পাঠানো সম্ভব। সবকিছু ঠিক থাকলে বছরে কোটি টাকার চারা যাবে।

আবদুল মমিন বলেন, তার নার্সারিতে ছয়জন লোক নিয়মিত কাজ করেন। তাদের প্রতিজনকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় গাছ লাগানোর সময়কাল হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। ওই সময় চারার চাহিদা থাকে বেশ।’

চাচা আবদুল মমিনের দেখাদেখি পাশের বরুড়া উপজেলার ঘোষপা এলাকায় চার যুবক হানিফ, সামছুল আলম, রবিউল আলম, খালেদুল ইসলাম মিলে প্রায় তিন একর জমিতে গ্রিন ওয়ার্ল্ড নার্সারি নামে একটি নার্সারি গড়ে তোলেন। গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তারা শুরু করেছেন চারা রপ্তানি। ওই বছর ১৬ হাজার ইউএস ডলার আয় করেন তারা চারা রপ্তানি করে।

ওই চার যুবকের একজন খালেদুল ইসলাম। তিনি জানান, চাচা আবদুল মমিনের লাইসেন্স ব্যবহার করে ২০২১ সালের জুন মাসে সমুদ্রপথে কাতার গেছে তাদের নার্সারির সাড়ে চার হাজার গাছের চারা। মাস দুয়েক পর দুবাইতে আরো চার হাজার ৪৪০ পিস বিভিন্ন জাতের আমের চারা রপ্তানি করা হয়। ওই চালানে ৪০ লাখ টাকার গাছের চারা বিক্রি করেন।

খালেদুল ইসলাম বলেন, তাদের নিজেদের তিন একর জমি। ওই জমিতে নার্সারি করেছেন। তাদের নার্সারিতে ১০ জন কর্মচারী রয়েছেন। তাদের থাকা-খাওয়াসহ ১০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে বেতন দেন।

কী কী গাছের চারা রপ্তানি হয়- এমন প্রশ্নে খালেদুল ইসলাম বলেন, চায়না মাল্টা, পয়সা মাল্টা, আম্রপালী, ক্ষীরসা, বারি ৪, থাই পেয়ারা, থাই পেয়ারা ৩, ৫, ৮, দেশি আমের চারা, গোলাপ জাম, থাই জাম, কাউ, ডেউয়া ও নারিকেল। মধ্যপ্রাচ্যেও দেশগুলোয় ফলের চারার চাহিদা রয়েছে জানিয়ে ম্যানেজার খালেদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে চারা উৎপাদন করি।