logo
আপডেট : ২৭ মে, ২০২২ ১৭:৪৪
৯ ব্যাটারের শূন্য রানের লজ্জার রেকর্ড
ক্রীড়া প্রতিবেদক

৯ ব্যাটারের শূন্য রানের লজ্জার রেকর্ড

মিরপুর টেস্টে ফল আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। প্রথম ইনিংসে চমৎকারভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ যে ম্যাচ জিততে পারবে না, তা চতুর্থ দিনেই অনেকটা নিশ্চিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। বাংলাদেশ জিততে পারেনি, বরং ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিক দল। শুক্রবার টেস্টের শেষ দিনে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সামনে মাত্র ২৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিতে সমর্থ হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা মাত্র ৩ ওভারেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায়। সেইসঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজ সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে জিতে নেয়।

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার এ টেস্ট সিরিজ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিল। দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা এ সিরিজ জয়ের মাঝ দিয়ে পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান বেশ পোক্ত করেছে। ৪ নম্বরে উঠে এসেছে তারা। ৬ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ৪০ পয়েন্ট। বাংলাদেশ রয়েছে অষ্টম স্থানে। ১৬ পয়েন্ট বাংলাদেশের। ৭২ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া রয়েছে শীর্ষে। আর ৯ দলের মধ্যে সবার নিচে রয়েছে ইংল্যান্ড। তাদের পয়েন্ট ১৮। বাংলাদেশের হারটা আগেই নির্ধারিত হয়েছিল। তবে পঞ্চম দিনে কতদূর যেতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয় ছিল। প্রথম ইনিংসের মতো এ ইনিংসেও সেই মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসকে বাংলাদেশকে পথ দেখাবেন, তেমনই প্রত্যাশায় ছিলেন সবাই। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার মুশফিক ও লিটন তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। আগের দিন মুশফিক ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর লিটন দাস ১ রানে।

তাদের ব্যাটিংয়ে ভর করে বাংলাদেশ এগোতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়নি। মাত্র ৩০ রানে তাদের জুটিটি ভেঙে যায়। মুশফিক ২৩ রানে কাসুন রাজিথার বলে বোল্ড হন। আর তখনই স্বল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাটা জোরালো হয়। তবে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন লিটন দাস। পরের উইকেটে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকে। দুজনের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ইনিংসে ধীরে ধীরে জমাট হতে থাকে। তবে পথটা যে মসৃণ ছিল না। একে তো বিশাল রানের চাপ, তার ওপর টপঅর্ডারদের চরম ব্যর্থতায় সেই চাপটা কয়েকগুণ ভারী হয়ে লিটন ও সাকিবের কাঁধে চেপে বসে। তারই মধ্যে ১০৩ রানের জুটি গড়েন তারা। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ন লিটন দাস এবার হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছে বিদায় নেন। মূলত সেখানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ১৫৬ রানে লিটন দাসের বিদায়ের পরপরই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংলাইন। আসলে বলা ভালো বোলার লাইন। পরের ৪ উইকেটে মাত্র ১৩ রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে।

সাকিব টেস্ট ম্যাচ অবশ্য টেস্ট মেজাজে খেলেননি। বরং বলা যায় তার ইনিংসে ছিল ওয়ানডে মেজাজের। ৭২ বলে ৫৮ রান করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই বাউন্ডারির আধিক্য ছিল। ৭টি বাউন্ডারি মেরেছেন। পরের ব্যাটার সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে মোসাদ্দেক হোসেন (৯), তাইজুল ইসলাম (১), খালেদ আহমেদ (০), এবাদত হোসেন (০*)। খালেদ আহমেদ শূন্য রানে আউট হওয়ায় লজ্জার এক রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। তাকে নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের তিন ব্যাটার শূন্য রানে আউট হয়। আর সব মিলিয়ে ম্যাচে বাংলাদেশের ৯ ব্যাটার বিনা রানে আউট হলেন। প্রথম ইনিংসে ছয় ব্যাটার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। এর ফলে এক ম্যাচে সর্বাধিক ব্যাটার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। তবে স্বস্তির বিষয়, এ রেকর্ডের একক মালিকানা বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার ৯ ব্যাটার একবার শূন্য রানে আউট হয়েছে।

১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে চন্ডিগড়ে শ্রীলঙ্কার ৯ ব্যাটার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। আর ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেনে এমন লজ্জায় ডুবেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২২ বছর পর আবার সেই লজ্জা দেখল বিশ^ ক্রিকেট। আর এবার এটা দেখালেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, সাকিব আল হাসান, এবাদত হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন ও খালেদ আহমেদ বিনা রানে আউট হয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়েছেন তামিম ইকবাল, খালেদ আহমেদ ও মুমিনুল হক। আসিথা ফার্নান্দো ৬ উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা ১০। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।