চৌদ্দ বছর আগের ঘটনা। ২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। প্রথম আসরেই ফাইনালে খেলেছিল রাজস্থান রয়্যালস। শুধু তাই নয়, হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। তারপর কোথায় যেনো দলটির দ্যুতি হারিয়ে গিয়েছিল। পরের মৌসুমগুলোয় বেশির ভাগ সময়ই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। জস বাটলারে ভর করে আবার যেনো ফিরেছে সেই দ্যুতি। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি থেকে আর একটা মাত্র ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে। শুক্রবার আহমেদাবাদে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জস বাটলারের ব্যাটিং তাণ্ডবে ভর করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে দলটি ফাইনালে পৌঁছেছে।
বেঙ্গালুরুর ৮ উইকেটে করা ১৫৭ রান ৭ উইকেট ও ১১ বল হাতে রেখে রাজস্থান জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায়। সে সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো তারা ফাইনালে পৌঁছায়।
আগের ম্যাচেও বাটলার অসাধারণ ব্যাটিং করেছিলেন। সে ম্যাচে তার সংগ্রহ ছিল ৮৯ রান। আর এ ম্যাচে করেছেন অপরাজিত ১০৬ রান। এ জন্য খেলেছেন মাত্র ৬০ বল। ইনিংসে ১০টি বাউন্ডারি ও ছয়টি ওভার বাউন্ডারি ছিল। তার এমন ব্যাটিংয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিল বেঙ্গালুরুর বোলাররা।
এ ম্যাচে সেঞ্চুরির মাধ্যমে বাটলার ইতিহাসের পাতায়ও স্থান করে নিয়েছেন। ভাগ বসিয়েছেন বিরাট কোহলির দুই রেকর্ডে। এক আসরে সর্বোচ্চ চার সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাটলার। এছাড়া সব মিলিয়ে আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচ সেঞ্চুরির রেকর্ড এককভাবে ছিল ভারতীয় সাবেক অধিনায়কের। উভয় রেকর্ডে কোহলি এখন একজন সঙ্গী পেলেন। এ ম্যাচের সেঞ্চুরির পর আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন হুমকির মুখে। ছয় সেঞ্চুরি নিয়ে সবার উপরে রয়েছেন ‘ইউনিভার্স বস’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল।
চলতি মৌসুমে বাটলার উড়ছেন। আর ঠিক ডুবছেন কোহলি। দলকে ফাইনালে তোলার লড়াইয়ে এ ম্যাচেও কথা বলেনি কোহলির ব্যাট। মাত্র ৭ রানে ফিরেছেন তিনি। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দেন। ৮ বলে ৭ রান করে কোহলির ফেরার পর বেঙ্গালুরু ইনিংস মেরামতের কাজটা ভালোভাবেই শুর করেছিল। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস ও রজত পাতিদার চমৎকারভাবে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু এবার বেঙ্গালুরুর শিবিরে আঘাত হানেন ম্যাকয়। তার বলে অধিনায়ক প্লেসিস ২৫ রানে ফিরে যান। তারপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার চেষ্টা যথেষ্ঠ ছিল না। ১৩ বলে ২৪ রানের ঝড়ো এক ইনিংস উপহার দেন। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা খেলেন পাতিদার। ৫৮ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।
তবে রাজস্থানের এ জয়ে বাটলারের যেমন কৃতিত্ব রয়েছেন তেমনি রয়েছে দলের দুই বোলার প্রষিদ্ধ কৃষ্ণা ও ওবেদ ম্যাকয়ের। দুইজনই বল হাতে বেঙ্গালুরুর ব্যাটারদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন। উভয়েই তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। দুইজনই যেন কৃপণতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। প্রসিদ্ধ ৩ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ২২ রান। আর ম্যাকয়কে দিতে হয়ে ২৩ রান।
১৫৭ রানে বেঙ্গালুরুকে বেঁধে দিয়ে জয়ের জন্য রাজস্থানকে খুব একটা দুঃশ্চিন্তা করতে হয়নি। মূলত বাটলারই দুঃশ্চিন্তা করতে দেননি। যশস্বী জয়সোয়াল ও বাটলার প্রথম ৫ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৬০ রান জড় করে দলের কাজটা সহজ করে দেন। এ সময়ে জয়সোয়াল ফিরে গেলেও সাঞ্জু স্যামসনকে নিয়ে দারুণভাবে লক্ষ্যের দিকে দলকে নিয়ে যান বাটলার। অবশ্য অধিনায়ক স্যামসন ২৩ রানে ফিরে যাওয়ার পর দেবদূত পাড়িক্কালও (৯) ফিরে যান। কিন্তু এতে রাজস্থানের জয় পেতে কোনা সমস্যা হয়নি। তার শতকে চড়ে রাজস্থান লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।আর টানা তৃতীয়বার প্লে অফেই থেমে যেতে হলো কোহলির বেঙ্গালুরুকে। সে সঙ্গে তাদের প্রথম শিরোপা জয়ের অপেক্ষাও বাড়লো।