নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি এবার দাম বাড়ল শিক্ষা উপকরণেরও। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজারঘুরে দেখা গেছে, বেড়েছে বই ও খাতার দাম। খাতার দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশল, শিক্ষা ও আইনের বইয়ের দাম। ফটোকপি বইয়ের দাম বেড়েছে গড়ে ২০ শতাংশ।
- খাতার দাম বেড়েছে ৪০%
- ফটোকপিতে ২০%
- কলম-পেন্সিল-জ্যামিতি বক্স-বইতেও অস্বস্তি
নীলক্ষেতের হাজী ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, দাম বাড়ায় ৩০ টাকার খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। জ্যামিতি বক্সের দাম আগে ছিল ৬০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এছাড়া ১০ টাকার কলম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। প্রতি ডজন পেন্সিল আগে বিক্রি হতো ৮০ টাকা আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। প্রতি পিস সার্পনার আগে বিক্রি হতো ১৫ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। মাঝারি সাইজের স্টেপলার ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতিটি বইয়ে কাগজের মান অনুসারে ২০ থেকে ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর নীলক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, বাচ্চাদের লেখার সেট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালিখাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মো. মোরশেদ বলেন, আমাদের অনেক বই ও গুরুত্বপূর্ণ সিট ফটোকপি করতে হয়। কাগজের এখন ফটোকপির পেছনে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়। আগে প্রতি পেজ ১ টাকা করে ফটোকপি করতাম। এখন তা করতে হচ্ছে দেড় টাকা থেকে দুই টাকায়।
আনোয়ার বুক হাউসের কর্ণধার আনোয়ার বলেন,বাজারে নতুন বইয়ের দাম বেড়েছে। এর কারণ হলো ঈদের পর কাগজের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি। আগের ২১০ টাকার বই এখন তা ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার কাগজের মান অনুসারে বইয়ের দাম কমে ও বাড়ে।
আইন প্রকাশনের মালিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি কাগজের দাম বেড়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন আগে প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন তা ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাগজের দাম বাড়ায় বই ও খাতার দাম বেড়েছে। এর অন্যতম আরেকটি কারণ মিল সিন্ডিকেট।
তারা বাজারে সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ায়। আল ফাতাহ ট্রেডার্সের রমজান আলী বলেন, আমাদের ব্যবসার অবস্থা তেমন একটা ভালো না। স্কুল-কলেজে ব্যবহৃত কাগজের দাম গত দুই সপ্তাহে রিম প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। লিটল কাগজ ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা। কাগজ সাইজ ভেদে রিমপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা হয়েছে। একই সঙ্গে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছাপার কাজে ব্যবহৃত কাগজের দাম রিম প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে।
৬১ গ্রাম ডিসি সাইজ ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ৭০ গ্রাম ডিসি কাগজ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। ৮০ গ্রাম ডিসি কাগজ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ১৮০ টাকা। এ ছাড়া কম্পিউটার প্রিন্টিং কাজে ব্যবহৃত কাগজের দাম ডাবল এ ফোর কাগজ ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা। বসুন্ধরা কাগজ ২৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। ফলে বাঁধাই খাতার দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা।
নীলক্ষেত মোড়ের নাসিব পাবলিকেশন্সের মালিক জনি সরকার বলেন, ব্যবহারিক খাতা ৪০ টাকারটা এখন ৫০ টাকা, ৬০ টাকারটা ৭০ টাকা। কলমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। মার্কার পেন প্রতি পিস ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা হয়েছে। জ্যামিতি বক্স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা।
এবি এন্টারপ্রাইজ মালিক আব্দুল বাতেন বলেন, কাগজের দাম বাড়ায় ৩০০ পেজের খাতা ৫০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, ১২০ পেজের খাতা ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, কালার পেপার রিম ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। মিনি ফাইল প্রতিটি ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা। জিপার ফাইল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। রেজিস্টার খাতা ৩০০ পেজ ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, ৫০০ পেজ ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। প্লাস্টিক ও স্টিলের স্কেল ডজনপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। রাবার ডজনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
রাশেদ প্রিন্টিং প্রেসের মালিক মো. রাশেদ আলী ভোরের আকাশকে জানান, আমার দোকানে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফটোকপি, প্রতিবেদন প্রিন্ট, স্পাইরাল করেন। যে প্রিন্টারের দাম ছিল ১৮ হাজার টাকা সেটা এখন ৩২ হাজার টাকা। যে ডিজিটাল প্রিন্টার দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কালির দাম সেট প্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা হয়েছে।
সোনালি কাগজের দাম প্যাকেট প্রতি ২২০ টাকা থেকে ২৯০ টাকা হয়েছে। স্পাইরাল প্লাস্টিকের দাম ২ টাকা থেকে ৫ টাকা হয়েছে। ফলে আমাদের ফটোকপি, প্রিন্ট, স্পাইরালের দাম বাড়াতে হয়েছে। ফটোকপি ৯৫ পয়সা থেকে ১ টাকা ১০ পয়সা, স্পাইরাল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিয়াজ আহমেদ বলেন, আগে একটি রিসার্চ কোর্সের বইয়ের ফটোকপি ও প্রতিবেদন তৈরি করতে ৯০০ টাকার মতো লাগত। কিন্তু এখন ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ হাজার টাকা লাগবে।