logo
আপডেট : ২৯ মে, ২০২২ ০৯:১৫
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
কর্তোয়ার অতি মানবীয় কীর্তিতে রিয়ালের ১৪তম শিরোপা
ক্রীড়া ডেস্ক

কর্তোয়ার অতি মানবীয় কীর্তিতে রিয়ালের ১৪তম শিরোপা

পারলো না লিভারপুল। তাদের কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। প্যারিসের স্তাদ দে ফ্রান্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় রিয়াল মাদ্রিদ ১-০ গোলে জয় পেয়েছে। এবারের শিরোপা জয়ের মাঝ দিয়ে রেকর্ড ১৪বার ইউরোপিয়ান ক্লাব শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলো রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জমানা শুরু হওয়ার পর এটা তাদের অষ্টম শিরোপা জয়। স্বাভাবিকভাবে এবারের শিরোপা জয়ের মাঝ দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদেরকে ধরা ছোয়ার বাইরে নিয়ে গেলো। কেননা রিয়ালের শিরোপা সংখ্যা যেখানে আঠার, সেখানো দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের শিরোপা সংখ্যা মাত্র সাত।

নির্র্ধারিত সময়ের খেলার ৫৮ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়র একমাত্র গোলটি করেন। রিয়ালের এ জয়ের নায়ক হিসেবে জুনিয়রের কথায় লেখা থাকবে। কিন্তু সেখানে লেখা থাকবে না আর কারো নাম। স্বাভাবিকভাবেই গোলরক্ষক থিবু কর্তোয়ার কথাও লেখা থাকবে না। অথচ লিভারপুলের বিপক্ষে রিয়ালের জয়ের নায়ক তিনি। লিভারপুলের বিপক্ষে একাই লড়েছেন। একের পর এক আক্রমণ রুখে দিয়েছেন। ইংলিশ ক্লাবটির সব আক্রমণ রিয়ালের এই গোলরক্ষক যেভাবে পেরেছেন আটকে দিয়েছেন। কখনো ডানে ঝাঁপিয়ে কখনো বায়ে। ইস্পাত দৃঢ়তায় লিভারপুলের সামনে যেনো উন্নতমানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন। যেদিক থেকে আক্রমণ আসুক সেদিকেই তার গ্লাভস দুটো ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে।

অবস্থা এমনই হয়েছে লিভারপুলের তো বটেই রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা কর্তোয়ার এমন পারফরম্যান্সে বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছে। ম্যাচের আগে লিভারপুলের জয়ের গুঞ্জন বাতাসে শিষ কেটে বেড়াচ্ছিল। এমনটাই হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ওই যে কর্তোয়া। সেই একাই লিভারপুলের জয়, একই সঙ্গে স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে।

প্রতিশোধের নেশায় উম্মত্ত থাকা মোহাম্মদ সালাহ প্রথম আক্রমণটি রচনা করেছিলেন। ১৬ মিনিটে ট্রেন্ট আলক্সান্ডার আরনল্ডের কাছ থেকে পাওয়া বলে যে শট নিয়েছিলেন তা কর্তোয়া রুখে দেন। কয়েক মিনিট পরই লিভারপুল তাদের দুর্ভাগ্যের কিছুটা হয়তো টের পায়। সাদিও মানের জোরালো শট কর্তোয়াকে পরাভূত করেও জালের দেখা পায়নি। জালে যাওয়ার আগে কর্তোয়ার হাতের স্পর্শ পেয়ে বল দিক পরিবর্তন করে। খুব বেশি নয়, একটু। আর তাতেই বল জালে না গিয়ে পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

প্রথমার্ধে সালাহ আরো কয়েকবার ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। কয়েকটা হাফ চান্সও পেয়েছিলেন। বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা ছিল নাজুক। লিভারপুরের আক্রমণের তোড়ে তারা ভুলেই গিয়েছিল মাঠের যে আরো অর্ধেক আছে। সেখানে যেতে, আক্রমণ রচনা করতে হবে। গোলের চেষ্টা করতে হবে। প্রথমার্ধে মাত্র একবারই তারা এ সুযোগ পেয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পুরো প্রতিযোগিতায় এই প্রথম প্রথমার্ধে তারা প্রতিপক্ষের পোস্টে এত কম শট নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগে রিয়াল মাদ্রিদ গোলও করেছিল। কিন্তু ভিএআর দেখে অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল হয়।

দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল প্রথমার্ধের আক্রমণেল ধারা অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু গোলের খেলা ফুটবল, সেই কাজটিই তারা করতে পারছিল না। একের পর এক কর্তোয়া বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর সে ফাঁকেই কাজের কাজটি করে রিয়াল মাদ্রিদ। ভিনিয়াস জুনিয়র স্তদ্ধ করে দেন লিভারপুল সমর্থকদের। একই সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে গোল করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার কৃতিত্ব দেখান।

গোল হজমের পরও লিভারপুলের আক্রমণ অব্যাহত থাকে। ১৮ গজ দূর থেকে সালাহর একটা শট আবারো ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। শেষ পর্যন্ত কর্তোয়ার বাধা আর পার হতে পারেনি লিভারপুল। স্বাভাবিকভাবেই এক গোলের হার নিয়ে তাদের মাঠ ছাড়তে হয়। সে সঙ্গে ফাইনালে আরো একটা হার তাদের সঙ্গী হলো। একই সঙ্গে ২০১৮ সালের ফাইনালের হারের প্রতিশোধ নেওয়া হলো না।

ম্যাচ শেষে কর্তোয়া বলেন, ‘আগের দিন আমি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম রিয়াল মাদ্রিদ যখন ফাইনাল খেলে তখন তারা চ্যাম্পিয়ন হয়। আমি ইতিহাসের একটা অংশ এখন। আমি আগের দিন অনেক টুইট দেখেছি। যাহোক আমার ক্যারিয়ারের জন্য এই ফাইনাল জয়টা দরকার ছিল। কেননা চমৎকার একটা মৌসুমের পরও আমি অনেক সমালোচনা দেখেছি।’

ফাইনালে হারটা লিভারপুলের জন্য বড়ই হতাশাজনক। কোয়াড্রপল জয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকা লিভারপুলকে মাত্র দুই শিরোপা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো। দিন কয়েক আগে লিগ শিরোপা জয়ে ব্যর্থ হওয়া লিভারপুল এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকেও বঞ্চিত হলো।

এদিকে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলোত্তি প্রথম কোচ হিসেবে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের কীর্তি গড়েছেন। তবে দুই ক্লাবের হয়ে। দুটো রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ও দুটো এসি মিলানের হয়ে। মিলানের হয়ে শিরোপা জিতেছিলেন ২০০৩ ও ২০০৭ সালে। মাদ্রিদের হয়ে প্রথমটি জিতেছিলেন ২০১৪ সালে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এ কীর্তির পর আনচেলোত্তি পাঁচ বড় লিগের হয়ে শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়েছেন। এ সম্পর্কে আনচেলোত্তি বলেন, আমি একজন রেকর্ড ম্যান। আমি গত বছর এখানে আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। একটা চমৎকার মৌসুম পার করেছি।’