ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিশন। পরের ম্যাচেই নিজেদের মাঠে কার্লো আনচেলোত্তির দল হোঁচট খায়। অখ্যাত এবং অপরিচিত দল শেরিফ টিরাসপলের কাছে হেরে যায় তারা। পরবর্তী অবশ্য ফিরতি লেগে টিরাসপলকে হারিয়েছিল। সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচের পাঁচ জয়ে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে আসে।
দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে শুরু হয় রিয়াল মাদ্রিদের চমক। এ রাউন্ডে হাড্ডাহাড্ডি এক লড়াইয়ের প্রত্যাশা ছিল ফুটবল ভক্তদের। কিন্তু তারা কেউ হতাশ হয়নি। যেমনটা চেয়েছিল অন্তত প্রথম লেগে তেমনই ঘটেছিল। কিলিয়ান এমবাপে, লিওনেল মেসি, নেইমার, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া সমৃদ্ধ প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ের কাছে যে তারা টিকবে না তা নিয়ে অনেকেরই কোনো সন্দেহ ছিল না। নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত প্রথম লেগের খেলায় ১-০ গোলে জয় দিয়ে পিএসজি অনেকটা কাজ এগিয়ে রেখেছিল। ফিরতি লেগের শুরুতেই অনেকেই রিয়াল মাদ্রিদের বিদায়ের ঘন্টা দেখতে পাচ্ছিল। নিজেদের মাঠের খেলায় রিয়াল মাদ্রিদ প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ে। ফলে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে রিয়াল মাদ্রিদের কমপক্ষে তিন গোল দরকার ছিল। আর হাতে ছিল মাত্র ৫১ মিনিট।
রিয়াল মাদ্রিদ অবশ্য অতটা সময় নেয়নি। মাত্র ১৭ মিনিটের এক ঝড়ে সব উলোটপালোট করে দিয়েছিল। পিএসজির স্বপ্নকে মাটিতে মিশিয়ে করিম বেনজেমা হ্যাটট্রিক করে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যান। কোয়ার্টার ফাইনালে কিছুটা সহজ পথ ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। প্রতিপক্ষ ছিল চেলসি। বিভিন্ন কারণে বিধ্বস্ত চেলসিকে তারা সহজে বিধ্বস্ত করে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়। আর এ ধাপটা যে সহজ হবে না তা তারা ভালো করেই জানতো। প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ও পেপ গার্দিওলার প্রশিক্ষণাধীনে ম্যানচেস্টার সিটি অসাধারণ খেলা উপহার দিয়ে চলেছিল। সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষ করে প্রথম লেগে। নিজেদের মাঠের খেলায় ম্যানসিটি ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে যায় ইংলিশ ক্লাবটি। ফিরতি লেগে গোলশূন্য প্রথমার্ধের ৭৩ মিনিটের এক গোলের সুবাদে ম্যানসিটির ফাইনাল খেলা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত ম্যানসিটি ৫-৩ গোল গড়ে এগিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই রিয়াল মাদ্রিদের জন্য সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সব রূপকথা আর কল্পনাকে হারা মানায় রিয়াল মাদ্রিদ। পিএসজির বিপক্ষে অসম্ভবকে সম্ভব করতে মাত্র ১৭ মিনিট লেগেছিল। আর এখানে মাত্র পাঁচ মিনিট। ভাগ্যও হয়তো তাদের সহায় ছিল। নতুবা ইনজুরি সময়টা পাঁচ মিনিটই বা হবে কেন? ৯০, ৯১ আর ৯৫ মিনিটে তিন গোল করে রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানসিটির বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। আর তাতেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে?
তারপর তো ফাইনাল। লিভারপুলের আক্রমণের তোড়ে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা। একের পর এক হাল ছেড়ে দেয় রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগ। তাদের অসহায় আত্মসমর্পনের মাঝে আক্রমণে নাস্তানাবুদ গোলরক্ষক থিুব কর্তোয়া বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। সফলও হন তিনি। গোলপোস্ট ঠিকঠাকবাবে আগলে রাখতে পারেন। আক্রমণের ধাক্কায় টালমাটাল হলেও ভেঙ্গে পড়েননি। তার পুরস্কারও পেয়েছেন। দল জিতেছে, আর ইতিহাস হয়েছেন কর্তোয়া। খেলার চূড়ান্ত ফলাফলে তার নাম থাকবে না ঠিকই তবে ভক্তদের মনের মাঝে ঠিকই থাকবেন।