চলতি বছরে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিক করতে চায় বিএনপি। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথ গরম রাখার চেষ্টায় বছর পার করবে দলটি। কর্মসূচি পালনে বাধা আসলে এখন থেকে প্রতিরোধের চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপির। চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২০২৩ সালকে আন্দোলনের বছর হিসেবে বেছে নিতে চায় বিএনপি। আগামী বছরের শুরু থেকেই সরকারের ক্ষমতার শেষ সময়ে অল্প দিনের কঠোর আন্দোলনের ছক কষছে দলটি।
-আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কাটবে চলতি বছর
-ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা
বিএনপি নেতারা বলছেন, আন্দোলন কখনো সময়ক্ষণ বেঁধে দিয়ে হয় না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ব্বগতি, সরকারের অপশাসনসহ নানা ইস্যুতে ক্ষিপ্ত জনগণ যেকোনো সময় সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করবে।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কঠোর মনোভাবে বেশ বেকায়দায় এখন বিএনপি। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর অনেটাই আশাহত হয়ে পড়ে এই দলটি। ওই নির্বাচনের আগে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হলে অভিভাবকহীন বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। কিন্তু কার্যত তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। তবে দলটি ঐক্যবদ্ধ থেকে গত বছরের শেষ সময়ে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়। একইসঙ্গে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর নড়েচড়ে বসে বিএনপি।
আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে মাঠে নামতে বর্তমানে বেশ সক্রিয় বিএনপি। সে লক্ষে দলটি দুটি বিষয়কে সামনে রেখে এগোচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় সে বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা। চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকারের বিরুদ্ধে থাকা দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন বিএনপি নেতারা। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলনের লক্ষে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়। শুরুর দিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া দ্রুত এগোলেও ‘জাতীয় সরকার’ ইস্যুতে বাধাগ্রস্ত হয় সেটি।
দলটি এবার আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৪ মে থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। প্রথম দিন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। গত শুক্রবার লেবার পার্টির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়েছে। জানা গেছে, অবশিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষ করতে এখনো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এই সংলাপ শেষ হওয়ার পর বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম ও দলটির বিভিন্ন সেক্টরের পরামর্শকদের সঙ্গে বসে বৃহত্তর ঐক্য ও আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে। ওই রূপরেখা তৈরিতে চলতি বছরের প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
এছাড়া চলমান সংলাপ বা জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে বিএনপি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠা সাধারণ মানুষকে নিজেদের পক্ষে রাখতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। যার মাধ্যমে রাজপথ গরম ও দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে চায় বিএনপি। কর্মসূচি বাস্তাবায়নে প্রতিবন্ধকতা ও আঘাত আসলে এখন থেকে তা প্রতিরোধেরও চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে চলমান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সংঘর্ষ তার আভাস মিলছে বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে।
সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা দ্রুত আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে কথাবার্তা বলছেন। কিন্তু আসলেই বিএনপি কী আন্দোলনে যাবে বা আন্দোলনের কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা?
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে দৈনিক ভোরের আকাশ। তাদের বেশির ভাগ নেতাই বলছেন, এখনই বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলন করবে না। বিশেষ প্রেক্ষাপট তৈরি করে জনরায় নিজেদের পক্ষে নিতে কাজ করছে বিএনপি। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিএনপি এবার ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে। বেশি দিন সরকারবিরোধী আন্দোলনে টিকে থাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংশয় থাকায় দলটির নেতারা এবার অল্প দিনের তীব্র আন্দোলন করতে চায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যে যাওয়ার পর ২০২৩ সালের প্রথমদিকে আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। পর্যায়ক্রমে ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলটি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় যুবদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মরতাজুল করিম বাদরুর সঙ্গে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি আন্দোলন করছে এবং যেকোনো সময় তার তীব্রতা বাড়তে পারে এটিও সঠিক। তবে দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলার কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপির মতো দল এত আন্দোলন আগে কখনো কেউ করেনি। দল আন্দোলনে আছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে শুরু করে নানা অপশাসনে মানুষ এখন এই সরকারকে একদিনও ক্ষমতায় রাখতে চায় না। অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকারের চলে যেতেও দিনক্ষণ লাগবে না বলে দাবি তার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মানুষের মুক্তির জন্যে আন্দোলনই এমমাত্র ভরসা। আন্দোলনের ক্ষেত্রে তারিখ বা দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলাটা অযৌক্তিক। চলতি বছরে সরকার পতন বা দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এমনও প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে যে কাল থেকে সরকার পতনের একদফার আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলনে আছে বলেও দাবি তার।