logo
আপডেট : ২৯ মে, ২০২২ ১৫:০৪
সীমাহীন ভোগান্তি কামরাঙ্গীর চরে
প্রণব কর্মকার

সীমাহীন ভোগান্তি কামরাঙ্গীর চরে

গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে কামরাঙ্গির চরের বাসিন্দারা

বকেয়া বিল ও অবৈধ সংযোগ ঠেকাতে একটানা প্রায় ১৮ দিন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।

গত ১০ মে এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস। এতে বৈধ ও অবৈধ সবার গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। গ্যাস বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাদের দাবি, নিয়মিত বিল পরিশোধ করে এলেও অবৈধদের জন্য বৈধ ভোক্তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই এলাকায় বৈধ সংযোগের থেকে অবৈধ সংযোগ কয়েকগুণ বেশি, বকেয়াও অইেশ।

তাই অবৈধ গ্রাহকদের শায়েস্তা করতে গ্যাসের বাল্ব খুলে আনা হয়েছে। এ জন্য বৈধ গ্রাহকদের গ্যাসও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অবৈধদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নিয়মিত অভিযান চলছে।

সব ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরিই বৈধ গ্রাহকরা গ্যাস পাবেন। তবে এর সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কেউ বলতে পারছেন না।

এ বিষয়ে তিতাসের এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস সচল করতে কামরাঙ্গীরচরে আমরা অভিযান শুরু করেছি। সেখানকার ঝাউচরে অসংখ্য অবৈধ লাইন রয়েছে।

লাইনগুলো উচ্ছেদ করেছি। অভিযান শুরুর পর বকেয়া বিল পরিশোধের হারও বেড়েছে। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

তিনি আরো বলেন, এলাকাটির মাটি খুঁড়তেই একের পর এক বেরিয়ে আসছে অবৈধ পাইপলাইন। যার কিছু অংশ কেটে পাইপের মুখ বন্ধ করে আবার মাটি ফেলে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।

এখানে বৈধ লাইনের চেয়ে অবৈধ লাইন কয়েকগুণ বেশি। আগে সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে, এরপর সংযোগ দেওয়া হবে। এর আগে নয়।

এলাকার বাসিন্দা কালাম হোসেন বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বেশ কয়েকদিন ধরে গ্যাস নাই।

বিকল্পভাবে রান্না করতে আমাদের খরচও অনেক বেশি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সংযোগ কারা দেয়? তিতাসের লোকজনই তো দেয়। সাধারণ মানুষ বা অন্য কেউ তো এ সংযোগ দিতে পারবে না।

তিতাস এমডি বলছেন, যে অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে তাকে ধরিয়ে দিতে। আমরা কিভাবে তাদেরকে ধরিয়ে দিব।

তারা যখন কাজ করে আমরা তো তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি না যে আপনারা কিসের কাজ করছেন। বা আমরা তো তাদের কাছে কাগজ দেখতে চাইতে পারি না।

আর বকেয়া বিলের কথা বলা হচ্ছে, এখানে সবার প্রিপেইড মিটার করে দিলেই তো আর বকেয়ার ঝামেলা থাকে না।’

আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আজ কতদিন হলো আমাদের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ নেই। আমরা তো মানুষ, আমাদের পরিবার, স্ত্রী, সন্তান আছে।

কিন্তু বাসায় কোনো রান্না হয় না গ্যাস না থাকার কারণে। আমরা ভাড়া থাকি। প্রতি মাসে বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের বিল দিচ্ছি।

আমার তো জানার কথা নয়, সংযোগ অবৈধ? নাকি বিল বকেয়া আছে? আমি তো ভোগান্তিতে আছি।’

অপর এক বাসিন্দা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে করুক, কিন্তু যারা বৈধভাবে গ্যাস নিয়েছে- তাদেরটাও বন্ধ কেন? আমরা এলাকাবাসী কি না খেয়ে থাকব?

আমরা তো এখানে ভাড়া বাসায় থাকি, নিয়মিত বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল দিই। তা হলে কেন আমাদের বাসায় রান্না বন্ধ থাকবে? অবৈধ যেসব গ্যাস সংযোগ আছে, সেখান থেকে তো তিতাস গ্যাসের কোনো কোনো অসাধু কর্তা টাকা নেন।

এদিকে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গ্যাস সংযোগ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাড়তি টাকায় সিলিন্ডার কিনে রান্নার কাজ চালাচ্ছেন অনেকে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, গ্যাস না থাকায় প্রথম কয়েকদিন হোটেল থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন তারা।

কয়েকদিন অপেক্ষায় থাকার পর বিকল্প পথ হিসেবে কেরোসিনের স্টোভ; আবার কেউ তো লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্না সেরেছেন।

গ্যাস না থাকায় স্থানীয় খাবার হোটেলগুলোও খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খাবার হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, হোটেলের খাবার সিলিন্ডারের গ্যাসে রান্না করতে হচ্ছে, সে কারণেই বেড়েছে খাবারের দাম।