মুহুমুর্হু আক্রমণ। সব আক্রমণ তিনি রুখলেন আপন দক্ষতায়। কখনো ঝাঁপিয়ে পড়ে, কখনো পা দিয়ে, কখনো হাত দিয়ে। সব মিলিয়ে রিয়ালের গোলপোস্টের নিচে তিনি যেন ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। ম্যাজিক্যাল এ গোলরক্ষককে টপকানোর সাধ্য কার? পারেনি কেউ। না সালাহ, না মানে। গোটা লিভারপুলের সংঘবদ্ধ আক্রমণ রুখে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের মূল নায়ক থাইবো কোর্তোয়া। তার গ্লাভসের জোড়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১-০ গোলের হারে আশা ভঙ্গের বিরহ সুর লিভারপুল শিবিরে।

গোলের খেলা ফুটবলে গোলই হয়তো শেষ কথা। তবে গোল না করেও তো হয়ে ওঠা যায় ম্যাচের নায়ক। যেমনটা করে দেখালেন কোর্তোয়া। রিয়ালের হয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন ভিনিসিউস জুনিয়র। খালি চোখে তরুণ এ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে মনে হতে পারে জয়ের মূল কারিগর। কিন্তু ম্যাচজুড়ে অবিশ^াস্য পারফরম্যান্সে নায়ক আসলে ওই কোর্তোয়াই। পুরো ম্যাচে মোট ৯টি সেভ করেন রিয়ালের গোলবারে এ অতন্দ্র প্রহরী। ২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি সেভ করার রেকর্ড এটি। শুধু সেভ করার সংখ্যা দিয়েই নয়, পুরো বক্সে তিনি আধিপত্য করেছেন। এতে দলের ডিফেন্ডারদের ওপর কমেছে চাপ, তারা রক্ষণ সামলেছেন কিছুটা নির্ভার হয়ে। প্রথমার্ধেই রিয়াল গোল খেতে পারত অন্তত দুটি। সেটি হয়নি কোর্তোয়ার কারণেই। ১৬ মিনিটে ৬ গজ বক্সে জটলার মধ্যে থেকে মোহামেদ সালাহ ঠিকমতো শট নিতে না পারলেও বল ছিল লক্ষ্যে, শেষ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে ফেরান কোর্তোয়া।

পাঁচ মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে আরেক তারকা ফরোয়ার্ড সাদিও মানের জোরাল নিচু শটে বল যাচ্ছিল জালের দিকে। ঝাঁপিয়ে হাত ছুঁয়ে বলের পথ কিছুটা পরিবর্তন করে দেন কোর্তোয়া। বল বাধা পায় পোস্টে। ৬৪ মিনিটে তো গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল লিভারপুল। কিন্তু এবারো তারা পারেনি কোর্তোয়ার দেয়াল ভাঙতে। ডি-বক্সের বাইরে ডান দিক থেকে বাঁ দিকে বল পায়ে কিছুটা আড়াআড়ি গিয়ে দূরের পোস্টে চমৎকার বাঁকানো শট নেন সালাহ, অসাধারণ নৈপুণ্যে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। ৫ মিনিট পর আবারো তিনি রিয়ালের ত্রাতা। একেবারে গোলমুখে সালাহর প্রচেষ্টা কোনোমতে পা দিয়ে আটকে দেন এবার। নির্ধারিত সময়ের ৮ মিনিট বাকি থাকতে লিভারপুলের আরেকটি প্রচেষ্টা ভেস্তে দিয়ে দলকে জয়ের পথে রাখেন কোর্তোয়া। এবার সালাহর কোনাকুনি শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় পা বাড়িয়ে ঠেকান তিনি। খানিক পরই মাদ্রিদের দলটি মেতে ওঠে শিরোপা উৎসবে।

আগে একবারই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলেছিলেন কোর্তোয়া। তবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জার্সিতে ২০১৪ সালে লিসবনের সেই ফাইনালে হারতে হয়েছিল রিয়ালের বিপক্ষেই। এবার রিয়ালের হয়ে প্রথমবার ইউরোপ সেরার ফাইনালে খেলতে নামার আগের দিন তিনি বলেছিলেন, প্যারিসে শিরোপা জিতে ভুলতে চান ৮ বছর আগের দুঃখ। সেটি তিনি পারলেন। বলা যায়, তিনিই দলকে জেতালেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এডউইন ফন ডার সারের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হলেন কোনো গোলরক্ষক। এতেই ফুটে উঠেছে ম্যাচে কোর্তোয়ার দাপট!