logo
আপডেট : ৩০ মে, ২০২২ ১০:০১
মুরগির খাবারের দামের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে?
ইফ্ফাত শরীফ

মুরগির খাবারের দামের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে?

একটি পোল্ট্রিফিডের আড়ৎ (ফাইল ফটো)

সম্প্রতি ডিমের দাম ডজনপ্রতি হয়েছে ১৩০ টাকা! হটাৎ করেই পুষ্টিকর এ খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড়। হটাৎ করেই ডিমের দাম এত কেন?

ভোরের আকাশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পোলট্রি খাবারের দাম বাড়ছে বলে মুরগি এবং ডিমের দাম বাড়ছে। পোলট্রিফিড পুরোপুরি দেশে উৎপাদন হলেও এর বেশকিছু কাঁচামাল আমদানিনির্ভর।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব আমদানিনির্ভর কাঁচামালের বেশিরভাগই আসে ইউক্রেন, রাশিয়া, ভারত এবং ব্রাজিল থেকে। সেসব দেশে পোলট্রিফিডের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূলত খাদ্যের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আর দফায় দফায় পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি খামারিদের নাজেহাল করে তুলেছে। চলতি বছরেই দুই থেকে তিনবার দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে গত দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের পোলট্রিফিডে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে।

অব্যাহতভাবে খাদ্যের দাম বাড়ায় ছোট খামারিরা ১৩০ টাকা ডজনে ডিম বিক্রি করেও তাদের খরচ পোষাতে পারছেন না। যার ফলে তারা খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, ফিডের দাম কমলে আবারো খামার চালু করা হবে।

ছোট খামারিরা খামার বন্ধ করে দেওয়ায় ডিমের সরবরাহও কমেছে, যা বাজারে ডিম এবং মুরগির মাংসের দাম বৃদ্ধিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। তবে মুরগীর খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের খুব একটা ভূমিকা নেই।

যে যার মতো করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে পোলট্রি মুরগির খাবারের নিয়ন্ত্রণে আসলে কার হাতে? গতকাল রোববার রাজধানির বেশ কয়েকটি পশুখাদ্যের খুচরা মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ডিম বেশি পাওয়া যায় এমন খাবার ‘লেয়ার লেয়ার-২’ খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।

৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। দুই মাস আগেও এক বস্তার দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা। আর এক বছর আগে দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা।

সোনালি মুরগির খাবার ‘সোনালি স্টাটার’ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর ৫০ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। দুই মাসের ব্যবধানে এর দাম বেড়েছে দুই থেকে তিনশ টাকা।

‘ব্রয়লার গ্রোয়ার’ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এর ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়, যা মাস ছয়েক আগেও ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা।

পোলট্রিফিড নিয়ে কাজ করে ‘নিউ হোপ এগ্রোটেক’ বাংলাদেশ লিমিটেড সিতাকুন্ড জোনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সঞ্জয় দেবনাথের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ফিড তৈরিতে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভুট্টা এবং ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সয়ামিলের দরকার হয়।

কয়েক মাসের ব্যবধানে সয়ামিল এবং ভুট্টার দাম অনেক বেড়েছে। গত বছর সয়ামিলের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৪ টাকা। আর এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

গত মাসে ব্রয়লার মুরগির ফিডের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৭ টাকা। এ মাসে তা হয়েছে ৬৩ টাকায়। পোলট্রিফিডের দাম বাড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, পোলট্রি ফিডের দাম হঠাৎ করে বাড়ছে না। প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

প্রতি মাসে বাংলাদেশে প্রয় ৬ থেকে ৭ লাখ টন পোলট্রি ফিড প্রয়োজন হয়। গত এক বছরেই পোলট্রি খাবারের দাম ৩ থেকে ৪ বার বেড়েছে। সারা বিশে^ই কাঁচামালের দাম বাড়ায় এ ফিডের দাম বাড়ছে।

এ খাতের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতি টন ফিড বিক্রি হচ্ছে ৬৭ হাজার ৭৫০ টাকায়, যা ৬ মাস আগেও ছিল প্রায় ৫২ হাজার ৬৫০ টাকা।

এ খাবার তৈরিতে ভাগ ভুট্টা, সয়ামিল এবং বিভিন্ন প্রটিনসহ আরো অনেক উপাদান ব্যবহার হয়ে থাকে। গম আর ভুট্টার বড় মার্কেট হচ্ছে ইউক্রেন এবং রাশিয়া। দুই দেশের যুদ্ধের ফলে বড় রকম সরবরাহ বর্তমানে বন্ধ আছে।

এ দুই দেশ ছাড়া ভারত এবং ব্রাজিল থেকে এখন আমদানি করা হয় কাঁচামাল। কোম্পানিগুলো যে লাভ করার জন্য দাম বাড়াচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়ে দাম বাড়াচ্ছে।

এদিকে খামারিরা বলছেন, ফিডের দাম বাড়লেও সেই তুলনায় তারা মুরগি ও ডিমের দাম পাচ্ছে না। তাই লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ তুলেতেই হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা।

লোকসানে পড়ে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে প্রভাব পড়ছে ডিম এবং মাংসের দামের ওপর। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বড়চৌনা বাজার এলাকার খামারি মো. জাহিদ হাসান।

৩ বিঘা জমিতে ৫টি শেডে শুরু করেছিলেন পোলট্রি খামার। তার মুরগি ছিল প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজারের মতো। বর্তমানে মুরগির খাবারের আকাশছোঁয়া দামের সঙ্গে টিকতে না পেরে মাসখানেক আগে ২টি শেড বন্ধ করে ফেলেন।

সামনে আরো বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন। জাহিদের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। তিনি বলেন, গত ৬ মাসেই খাদ্যের দাম প্রতি বস্তায় প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমাদের প্রতিদিন তিন থেকে ৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। কিন্তু এ টাকাই আমরা তুলতে পারি না। এছাড়া মুগির জন্য যে ভ্যাকসিন দরকার সেগুলো উপজেলা প্রাণিসম্পদ কেন্দ্রে গেলে আমরা ঠিকমতো পাই না।

কোম্পানি থেকে কিনতে গেলে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হচ্ছে। আবার দাম কমলে ব্যবসা শুরু করব।

শুধু জাহিদ নয়, তার মতো দেশের এমন অনেক খামারি তাদের ব্যবসা বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তিনি।