শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ হারার পর অধিনায়ক মুমিনুল হক বেশ আলোচিত। বাজে ফর্মের কারণে তিনি টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন কিনা, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। তার বিকল্প খুব বেশি না থাকায় অনেকে মুমিনুলকেই সময় দিতে রাজি। লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সিরিজ হারের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, মুমিনুলের সঙ্গে একান্তে বসবেন তিনি। খুঁজে বের করবেন সমাধানের পথ। সেই আলোচনা এখনো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল বিসিবির বোর্ড সভা রয়েছে। এখানেই ক্যারিবীয় সফরসহ মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনা হবে।
একজন ব্যাটারের সময় খারাপ যেতেই পারে। কিন্তু মুমিনুলের চাপটা পাহাড়সম। তিনি একইসঙ্গে বাংলাদেশ টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যাটার, আবার টেস্ট দলের অধিনায়কও। গত জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর রানখরায় ভুগতে থাকা মুমিনুল সর্বশেষ ৫ টেস্টে ৬.৭৭ গড়ে করেছেন ৬১ রান। ২০১৭ সালে চন্দিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ দলের কোচ থাকতেও কঠিন সময় গেছে বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটারের। কিন্তু সেই চাপের সঙ্গে তার বর্তমান সময়ের চাপের পার্থক্য আছে। এবার ফর্মের সঙ্গে সমান আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তার অধিনায়কত্ব নিয়েও। ২০১৯ সালের পর সাকিব আল হাসান আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর আকস্মিক টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন মুমিনুল। ১৭ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৩ জয় আর ২ ড্রয়ের বিপরীতে হার ১২টিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়। তবে সেই সাফল্য ছাপিয়ে মুমিনুলের দিকে সমালোচনার তীর ছুটে যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে দলের টানা হার আর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হওয়ায়।
আগামীকাল বোর্ড সভায় আলোচনা হতে পারে টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়ে। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা আগে মুমিনুলের সঙ্গে আলোচনা করব। সে যদি বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও অধিনায়কত্ব করতে চায়, করবে। ওর কথাকে আমরা সম্মান করব। তবে এটা ঠিক, অধিনায়কত্বের চাপে সে রান পাচ্ছে না।’ দুর্দান্ত ব্যাটার মুমিনুলকে ফিরে পেতেই বিকল্প অধিনায়কের খোঁজে আছে বিসিবি। কিন্তু বিকল্প খুব কম। সাকিবের কথা শোনা গিয়েছিল বেশ উচ্চৈঃস্বরে। কিন্তু সেই সাকিব কদিন আগে বলেছিলেন, ‘টেস্টে এ মুহূর্তে মুমিনুল ছাড়া আমাদের আর কোনো অপশনও নেই। ওকে তাই আমাদের সমর্থন করা উচিত।’ এক নির্বাচক অবশ্য পরশু বলেন, ‘আমরা সবাই ওকে (মুমিনুলকে) সমর্থনই করছি। কিন্তু সেটি সে কাজে লাগাতে পারছে না। চারিত্রিকভাবে নরম স্বভাবের হওয়ায় এটি হতে পারে।’ সাকিব এ দায়িত্ব নিতে নারাজ। সেটি তার কথা বার্তায় বোঝা গেছে। নতুনদের মধ্যে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে লিটন দাসের নাম। অবশ্য দুর্দান্ত ছন্দে থাকা লিটন এখনই অধিনায়কত্বের ভার নিতে তৈরি কি না, সে প্রশ্নও আছে। জুন-জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর বাংলাদেশের পরের টেস্ট সিরিজ নভেম্বর-ডিসেম্বরে, ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে। হাতে যথেষ্ট সময় থাকায় তাড়াহুড়োর পক্ষে নন কেউ কেউ। সিদ্ধান্ত যেটাই হোক, নেতৃত্ব নিয়ে মুমিনুল কী ভাবছেন, সেটি আগে জানতে চায় বিসিবি।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ (১১টি) টেস্টের মালিক মুমিনুলের ওপরই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিতে চায় বিসিবি। মূলত এটা নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হওয়ার কথা। বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুসের মতে, ‘আমার মনে হয় যে, সম্ভবত তার (মমিনুল) সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, তার কোনটা হলে ভালো হয়। এটা নিয়েই তার সঙ্গে কথা বলার কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট সাহেব এলে তার সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলবেন।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ১০ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। দলের নেতা হিসেবে ব্যাট হাতে কোনো অবদানই রাখতে পারেননি মুমিনুল। প্রথম ইনিংসে ৯ রান করা বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান পরের ইনিংসে রানের খাতাও খুলতে পারেননি। চট্টগ্রাম টেস্টে এক ইনিংসে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ, মুমিনুল করেন ২ রান। তিন ইনিংসে তার রান ১১। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি। দুই টেস্টের চার ইনিংসে করেন মাত্র ১৩ রান। সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে টপঅর্ডার এ ব্যাটসম্যানের রান ১৭০, গড় মাত্র ১২.১৪। ১৫ ইনিংসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৮ রান। বাকি ১৪ ইনিংসের মধ্যে মাত্র দুবার দুই অঙ্কের রান করেছেন মুমিনুল। রানে ফিরতে মরিয়া মুমিনুল অবশ্য কঠোর পরিশ্রম চালু রেখেছেন। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেএসপির প্রধান ক্রিকেট উপদেষ্টা ও প্রবীণ কোচ নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা কাজ করেন তিনি। অনুশীলন শেষে নাজমুল আবেদীন বলেন, ‘মুমিনুল বেশ লম্বা সময় ধরে একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় অনেকে ভালো করতে গিয়ে আরো খারাপ করে ফেলে। এগুলো করতে করতে মূল থেকেই সরে যায়। তাই মৌলিক দিকগুলো নিয়েই একটু কাজ করেছি। আমার মনে হয়, একসময় মৌলিক দিকটা ভালো ছিল, এখন সেটা নেই।’