logo
আপডেট : ১ জুন, ২০২২ ১১:০৮
আইনের প্রয়োগ নেই, যত্রতত্র ধূমপান
শাহীন রহমান

আইনের প্রয়োগ নেই, যত্রতত্র ধূমপান

প্রকাশ্যে ধূমপান আইনে নিষিদ্ধ। প্রকাশ্যে ধূমপানে শাস্তির বিধান থাকার পরও ফ্রি স্টাইলে চলছে ধূমপান। অবস্থা এমন যে আইনের প্রতি কারো তোয়াক্কা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ ১৭ বছরেও পরিলক্ষিত হয়নি। এ কারণেই প্রকাশ্যে ধূমপান করলে শাস্তি হতে পারে তা বিশ্বাস করে না ধূমপায়ীরা। আবার আইন সম্পর্কে নেই অনেকের ধারণা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালে আইন তৈরির পরপরই প্রকাশ্য ধূমপানের প্রবণতা কমে আসে। কিন্তু আইন বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা না থাকায় এখন বাস, রাস্তাঘাটসহ সব উন্মুক্ত স্থানেই প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান।

শুধু প্রকাশ্য স্থানে নয়, উঠতি বয়সিরা এখন ধূপমানে আসক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত সচেতনতার অভাবে কিশোররা ধূমপান করছে। সরকার যদি আইন কার্যকরে উদ্যোগী হতো এবং সচেতনা গড়ে তুলতে প্রচার চালাত তাহলে এই সমস্যা তৈরি হতো না। এ ছাড়া পারিবারিক অসচেতনতা দায়ী এর জন্য। তারা বলেন, প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করতে হলে এখনই আইনের কার্যকর ব্যবস্থা নেতে হবে। আইন প্রয়োগের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের এ বিষয়ে আরো দায়িত্ববান হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান নিষিদ্ধের আইনটি দেশের জন্য যুগান্তকারী। মূলত সচেতনতা গড়ে তোলা এবং প্রচারের অভাবেই তা কার্যকর করা যায়নি। ফলে এখন সর্বত্র প্রকাশ্যেই এবং নির্বিঘ্নভাবেই চলছে ধূমপান।

তারা বলছেন, ১৭ বছর আগের আইনটি কার্যকর না থাকায় নতুন প্রজন্মের অনেকে জানেই না এর বিরুদ্ধে দেশে আইন রয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে ইচ্ছামতো এবং প্রকাশ্যে ধূমপানের প্রবণতা বেড়েছে।

তবে সরেজমিন দেখা গেছে, আইন তৈরির পর পাবলিক পরিবহনের ধূমপানের প্রবণতা কমেছে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ প্রকাশ্যে তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে তারা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। বিশেষ করে রাস্তায় পাশের বিড়ি-সিগারেট বিক্রির দোকালগুলোতে ছোট ছোট লিফলেট আকারে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাস্তার পাশে চায়ের দোকানগুলোতে প্রকাশ্যে ধূমপান চলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এর প্রবণতা থেমে নেই। যানবাহনের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা কম থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালক ধূমপান করে থাকে প্রকাশ্যে। এ ছাড়া বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ, স্টিমারে ধূমপান চলে অনেকটা ফ্রি স্টাইলে। এ অবস্থায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্ত করার পাশাপাশি পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহণে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান- প্রজ্ঞা।

প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট ৭১ বিলিয়ন শলাকা সিগারেট উৎপাদিত হয়েছে। সিগারেটের ফেলে দেওয়া ফিল্টার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে প্রায় এক দশক সময় নেয়, আর মিশে যাওয়ার সময় এ থেকে সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে সরকার এক টাকাও ব্যয় করছে না। সরকার যদি এই আইন কার্যকরের আগে ছয় মাস প্রচার চালাত এবং জনগণকে ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতন করত তাহলে প্রকাশ্যে ধূমপানের প্রবণতা অনেক কমে আসত।

তিনি বলেন, একজন ধূমপায়ীর কারণে অন্যজন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। এটা মানুষের নাগরিক অধিকার। কিন্তু আইনে থাকলেও কোথাও এই অধিকারের প্রয়োগ নেই। প্রকাশ্যে ধূমপানের কারণে শুধু পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টি আমলে নিয়েই আইনটি করা হয়েছিল। কিন্তু শুধু আইন করেই ক্ষান্ত দেয়া হয়েছে। ফলে প্রকাশ্যে ধূমপানের প্রবণতা অনেক বেড়েছে।

গত ২ বছর ধরে সারাবিশ্ব করোনা মহামারিতে আক্রান্ত। বিশ^ব্যাংক এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে, যারা ধূমপানে আসক্ত তারাই মূলত করোনায় বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বে করোনায় যত মানুষ মারা গেছে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত ছিল। তাদের মতে তামাকের কারণে বিভিন্ন রকম ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, এজমাসহ নানা মৃত্যুঘাতী রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ৯৮.৭ ভাগ মানুষের মধ্যে অন্তত একটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। ৭৭.৪ ভাগ মানুষের মধ্যের অন্তত দুটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। ২৮.৩ ভাগের মধ্যে অন্তত তিনটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। এ গবেষণায় দেখা গেছে, হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে যথাক্রমে ১৭.৯ ভাগ এবং ৩.৯ ভাগ। যা তামাক সেবনের কারণে মূলত হয়ে থাকে।